নলহাটি পাথর শিল্পাঞ্চলে রাজস্ব ফাঁকি, ওভারলোডিং বন্ধে কড়া জেলা প্রশাসন
বর্তমান | ২৭ নভেম্বর ২০২৪
সংবাদদাতা, রামপুরহাট: নলহাটি পাথর শিল্পাঞ্চলে ওভারলোডিং বন্ধে কড়া হচ্ছে প্রশাসন। এবার থেকে সারপ্রাইজ ভিজিট ও আচমকা রেইড করে ওভারলোডিং রুখবে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হচ্ছে। ওভারলোডেড লরি ধরা পড়লেই মোটা টাকা জরিমানার পাশাপাশি কেসে জর্জরিত হতে হবে মালিককে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাথর শিল্পাঞ্চলের রাস্তায় বসানো হয়েছে রয়্যালটি আদায়ের গেট। তবে নলহাটিতে রয়্যালটি আদায়ের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে স্থানীয় ট্রাক্টরগুলিকে। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অনেকে ক্র্যাশার থেকে ট্রাক্টরে পাথর ওভারলোডিং করে রয়্যালটি গেট পার করে জাতীয় সড়কের কাছাকাছি গোলায় মজুত করছিল। লেড কারখানায় ট্রাক্টরের ডালাগুলির দৈর্ঘ্য, প্রস্ত ও উচ্চতা বাড়িয়ে ১৭-১৮ টন পাথর বহন চলছিল। পরে গোলা থেকে লরি, ডাম্পারে চাপিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় পাচার করা হচ্ছিল। পুলিস প্রশাসনের একাংশের মদতে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে কারবার চলছিল বলে অভিযোগ ওঠে। যার জেরে গত বুধবার পাথর শিল্পাঞ্চল যাওয়ার রাস্তা অবরোধও করেন স্থানীয়রা। গত বৃহস্পতিবার নবান্নে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়েছেন, স্থানীয়স্তরে কিছু অফিসার ও পুলিস টাকা খেয়ে অবৈধ কারবারে মদত দিচ্ছে। দুর্নীতি, তোলাবাজি, বেআইনি পথে ইনকাম কোনওভাবেই বরদাস্ত করা হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন তিনি। এরপরই শুক্রবার অভিযানে নামে পুলিস প্রশাসনের কর্তারা। একাধিক গোলা বন্ধের পাশাপাশি ন’টি ওভারলোডেড পাথর বোঝাই ট্রাক্টর আটক করে। সেইসঙ্গে চারটি লেড কারখানা সিল করে দেওয়া হয়।
পরিবহণ দপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ট্রাক্টরে সর্বোচ্চ তিন টন পাথর বহন করা যাবে। অন্যদিকে লরি ও ডাম্পারগুলি পূর্ব নির্ধারিত ওজনের পাথর বহন করতে পারবে। বেনিয়ম হলেই কড়া ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন। সেজন্য সারপ্রাইজ রেইড করা হবে। জরিমানার পাশাপাশি কেস দেওয়া হবে। আর এতেই পাথর শিল্পাঞ্চল বিশেষ করে স্থানীয় ট্রাক্টর চলাচল অনেকটা কমে এসেছে। রামপুরহাট এআরটিও সৌমেন নন্দী বলেন, সারাবছর ধরেই আমরা ওভারলোডিং রুখতে অভিযান চালাই। তবে বড়সড় অভিযান হয়েছে গত শুক্রবার। কোনওমতেই ওভারলোডেড যানবাহন চলাচল করতে দেওয়া যাবে না।
অন্যদিকে নলহাটি ১ ব্লকের বিএলএলআরও রক্তিম ঘোষ বলেন, জেলা প্রশাসনের নির্দেশে গোলাগুলি পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ব্লক সার্ভিলেন্স টিম গঠন করা হয়েছে। যেখানে বিডিও, ওসি এবং বিএলএলআরও কনভেনর হিসাবে রয়েছেন। প্রায়ই অভিযান চলবে। এখানে রাজস্ব ফাঁকি ও ওভারলোড ভবিষ্যতে চলবে না এটুকু বলতে পারি। প্রশাসনের এই পদক্ষেপে খুশি এলাকার মানুষ। তাঁরা বলেন, পাথর বোঝাই ওভারলোডেড যানবাহন চলাচলের ফলেই রাস্তা বেহাল পড়ছে, পাশাপাশি দূষণ হচ্ছে। দেরিতে হলেও প্রশাসনের বোধোদয় হওয়ায় এবার সুস্থ পরিবেশ ফিরে পাব।