নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: চোপড়ার আসুরাবস্তির দাসপাড়া। অত্যন্ত দরিদ্র গ্রাম। অধিকাংশ মানুষই চাষি। সেই গ্রামের শিক্ষিত যুবক বলতে গোলাম মুস্তাফা। গ্রামেই সে খুলেছিল একটি ব্যাঙ্কের কাস্টমার সার্ভিস পয়েন্ট। অ্যাকাউন্ট খোলা থেকে টাকা লেনদেনের ক্ষেত্রে গ্রামবাসীর অন্ধ ভরসাকে পুরো মাত্রায় কাজে লাগায় ট্যাবের টাকা জালিয়াতির অন্যতম চাঁই গোলাম। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, বার্ধক্য ভাতা, কৃষক বন্ধু প্রকল্পে টাকা ঢুকবে, এই টোপ দিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলিয়ে নেওয়া হয়েছিল। অ্যাকাউন্ট খোলানো হয়েছিল এলাকার নাবালকদের নামেও।
আসানসোল কন্যাপুর স্কুলের পড়ুয়াদের ট্যাবের টাকা জালিয়াতির মাস্টারমাইন্ড গোলাম মুস্তাফাকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেল পুলিস। স্নাতক এই গোলামের খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরেছে আসানসোল- দুর্গাপুর পুলিস কমিশনারেটের সাইবার থানার অফিসাররা। চোপড়া সহ বিভিন্ন জায়গায় হানা দিয়েও তার হদিশ মেলেনি। অবশেষে তাকে পাওয়া গিয়েছে দার্জিলিং জেলার ফাঁসিদেওয়ায়। পুলিস যখন তার পিছনে ধাওয়া করে রাজ্য চষে বেড়িয়েছে, তখন সে তার গোপন ডেরা থেকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করছিল। পুলিস সূত্রে দাবি, সরকারি ওয়েবসাইটে কারচুপি করার কাজও করেছে সাইবার সংক্রান্ত কাজে দক্ষ গোলাম। তাঁকে দীর্ঘ সময় ধরে জেরা করে আরও তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করছে পুলিস।
এসিপি বিশ্বজিৎ নস্কর বলেন, ট্যাবের টাকা জালিয়াতি কাণ্ডের অন্যতম বড় মাথা গোলাম মুস্তাফা। আমরা তাকে দার্জিলিং থেকে গ্রেপ্তার করেছি। জেরা করে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গিয়েছে।
আসানসোলের কন্যাপুর হাইস্কুলের সাত পড়ুয়ার ট্যাবের টাকা গায়েব হয়। স্কুলের পক্ষ থেকে আসানসোল সাইবার থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়। তাঁদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এফআইআর করে মামলার তদন্ত করে পুলিস। বাকি স্কুলের ট্যাবের টাকা প্রতারণার অভিযোগগুলি এই মামলার সাথেই যুক্ত হয়। কন্যাপুরের তদন্ত করতে গিয়েই পুলিস হদিশ পায় আসুরাবস্তি দাসপাড়া এলাকার। সেখানকার বাসিন্দাদের অ্যাকাউন্টেই গিয়েছিল কন্যাপুরের পড়ুয়াদের ট্যাবের টাকা। অ্যাকাউন্ট হোল্ডারদের জেরা করেই পুলিস জানতে পারে, এই সবের মূলে গোলাম।
শুধু কন্যাপুর নয়, আরও বহু স্কুলের পড়ুয়াদের টাকা ঢুকেছে এই এলাকার চাষি, গৃহবধূ, এমনকী নাবালকদের অ্যাকাউন্টেও। গ্রামের অত্যন্ত আস্থাভাজন ছেলে গোলাম। ওই গ্রাম থেকে স্নাতক হওয়ার নজির রয়েছে তার। সেই শিক্ষিত ছেলে যে ট্যাব কাণ্ডের মাথা জেনে হতবাক এলাকাবাসী। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গরিব মানুষদের অ্যাকাউন্টে সেই টাকা ঢোকার পরই গোলাম জানিয়েছিল, ভুল করে টাকা ঢুকে গিয়েছে। এই বলে তাঁদের কাছ থেকে ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে নিজের সিপিসি থেকে প্রতারণার পুরো টাকাই হাতিয়ে নেয় সে।