সংবাদদাতা, রায়গঞ্জ: শেষ ইচ্ছে ছিল মৃতদেহ মেডিক্যালের পড়ুয়াদের স্বার্থেই ব্যবহার করা হোক। সেইমতো রায়গঞ্জের বাসিন্দা নারায়ণ চন্দ্র দাসের (৭৩) মৃতদেহ দান করা হল রায়গঞ্জ মেডিক্যালে। এই প্রথম সেখানে কোনও দেহদান করা হল বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। রায়গঞ্জ শহরের ১০ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা পেশায় প্রাক্তন ব্যাঙ্ককর্মী নারায়ণবাবু সোমবার রাতে বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর পরিবার রাতেই মৃতদেহ নিয়ে মেডিক্যালে আসেন দেহদানের জন্য। মঙ্গলবার সমস্ত আইনিপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দেহ তুলে দেন মেডিক্যাল কলেজকে। নারায়ণবাবুর স্ত্রী গায়ত্রী দাস বলেন, স্বামী বারবার বলতেন দেহদান করবেন। তবে দেহদানের অঙ্গীকার করেছিলেন জানতাম না। মৃত্যুর দু’সপ্তাহ আগে রায়গঞ্জ মেডিক্যালের আব্দুলঘাটা ক্যাম্পাসে যোগাযোগ করেছিলেন দেহদানের জন্য। মেডিক্যালের তরফ থেকে জানানো হয় কিছু পরিকাঠামোগত সমস্যা রয়েছে। এরপর আমরা মালদহ মেডিক্যালে যোগাযোগ করি। সেখানে ব্যবস্থা রয়েছে জানতে পেরেছিলাম। এক সপ্তাহ ধরে উনি খুব অসুস্থ ছিলেন। কিডনি ও রক্তের সমস্যায় ভুগছিলেন। সোমবার রাতে মৃতদেহ নিয়ে গেলে মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ সমস্ত ব্যবস্থা করে।
এই প্রথম মেডিক্যালে দেহদান হওয়াই আইনি প্রক্রিয়া শেষ করতে বেশখানিকটা সময় লেগে যায়। প্রায় সারাদিনই কেটে যায় সেই কাজে। রায়গঞ্জ থানার আইসি বিশ্বাশ্রয় সরকার বলেন, কিছু আইনি প্রক্রিয়া ও কাগজপত্র ঠিক করার বিষয় ছিল। আমরা পুলিস প্রশাসনের তরফ থেকে মৃতের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে যত দ্রুত সম্ভব কাগজপত্র তৈরি করে দিয়েছি। রায়গঞ্জ শহরে দেহদানের মত মহৎ কাজকে সাধুবাদ জানিয়েছেন পুরপ্রশাসক সন্দীপ বিশ্বাস। তাঁর কথায়, মেডিক্যাল চিকিৎসা ও বিজ্ঞানকে উঁচু জায়গায় পৌঁছে দিতে নারায়ণবাবু তাঁর দেহ দান করেছেন, এটা খুব ভালো দিক। তাঁর আত্মার শান্তি কামনার পাশাপাশি পরিবারের প্রতি সমবেদনা রইল। এদিন রায়গঞ্জ মেডিক্যালের সুপার স্পেশালিটি বিল্ডিংয়ে নারায়ণবাবুকে শেষশ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর দেহ অ্যাম্বুলেন্স করে আব্দুলঘাটার অ্যাকাডেমিক বিল্ডিংয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। রায়গঞ্জ মেডিক্যালের অ্যানাটমি বিভাগের প্রধান রুদ্রদেব মেউর বলেন, নারায়ণবাবু তাঁর দেহ ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার জন্য দান করেছেন। আমরা সম্মানের সঙ্গে গ্রহণ করেছি।