নিজস্ব প্রতিনিধি, বারাকপুর: নৈহাটির বড়মা’র মন্দিরে পুজো ও অঞ্জলি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রার্থনা করলেন গোটা রাজ্যবাসীর জন্য। আরতি করলেন মায়ের উদ্দেশ্যে। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন রাজ্য পুলিসের ডিজি রাজীব কুমার এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মা লতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুজো দেওয়ার পর পুরোহিতদের কাছে জানতে চাইলেন, মন্দিরের কোন সমস্যা রয়েছে, কী করতে হবে। তাঁরা জানান, দিন দিন ভক্তের সমাগম বাড়ছে। একটা পুলিস ফাঁড়ি করলে ভালো হয়। রাজ্য পুলিসের ডিজিকে সেই ফাঁড়ি তৈরির নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে বড়মা মন্দির কমিটির চেয়ারম্যান অশোক চট্টোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রীকে জানালেন, আমাদের এখানে ফেরিঘাট রয়েছে। যে ঘাট থেকে মন্দির পর্যন্ত বহু মানুষ দণ্ডি কাটেন। এটি বড়মার নামে করা হোক। জেলাশাসককে তা রূপায়নের নির্দেশ দেওয়ার সঙ্গেই এমপি ল্যাড থেকে ১০ লক্ষ টাকা দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেন মমতা। এরপর মন্দিরের বাইরে অপেক্ষারত সাংবাদিকদের তিনি বললেন, বড়মার মন্দিরে লক্ষ লক্ষ দর্শনার্থী আসেন। অনেক মানুষ দণ্ডিও কাটেন। মা ডেকেছেন, তাই আসতে পারলাম। মা মাটি মানুষের গোত্রে বাংলার সমস্ত মানুষের জন্য পুজো দিলাম, প্রার্থনা করলাম।
পাঁচ বছর আগে বারাকপুর শিল্পাঞ্চল বিশেষ করে ভাটপাড়া-নৈহাটি এলাকার ‘সন্ত্রস্ত’ দিনগুলির প্রসঙ্গ উত্থাপন করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, অনেক মানুষ ঘরছাড়া হয়েছিলেন। পার্টি অফিসে দখল হয়ে গিয়েছিল। আমি এসে সেই পার্টি অফিস খুললাম। রং করলাম। নৈহাটি, ভাটপাড়ার মানুষকে সাহস জোগালাম। আজকে আসার সময় ওই পার্টি অফিস দেখলাম। সেবার আমাকে অনেক কুকথা শুনতে হয়েছিল। আমি সে সব ভুলে গিয়েছি। খারাপ কথা মনে রাখতে নেই। পার্থ ভৌমিক এমপি হবার পর নৈহাটি ও ভাটপাড়া হাসপাতালের ওপিডি তৈরি করতে ২ কোটি টাকা করে দিচ্ছে। ওকে আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আজ সংবিধান দিবস, আমরা ধর্মনিরপেক্ষ। সংবিধান প্রণেতাদের প্রণাম জানাই। বন্দেমাতরম এর জনক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্মস্থান এটা। তাঁকেও প্রণাম জানাই। নবান্নে ফিরে সংবিধান প্রণেতা বি আর আম্বেদকরের প্রতিকৃতিতে মালাও দেন মুখ্যমন্ত্রী।
বড় মা’র মন্দির থেকে বেরিয়ে আর গাড়িতে ওঠেননি মমতা। অরবিন্দ রোডের দু’ধারে জনস্রোতে ভাসতে থাকেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। জয় বাংলা স্লোগান আর গণ উচ্ছ্বাসের মাঝে জনসংযোগ সারতে সারতে এগিয়ে যান মমতা। রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা শিশুদের আদর করেন। ভিড় সামলাতে সে সময় হিমশিম খেতে হচ্ছিল নিরাপত্তা রক্ষীদের। নৈহাটি স্টেশন পার করে প্রায় দু’কিলোমিটার পথ পরিক্রমা করেন তিনি। ঘোষপাড়া রোডে প্রাক্তন বিধায়ক তরুণ অধিকারীর নার্সিংহোমের সামনে থেকে গাড়িতে উঠে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। যাওয়ার পথে বিজয়নগরে একটি পার্টি অফিসের সামনে দলীয় কর্মীরা ঢাক বাজাচ্ছিলেন। গাড়ি থেকে নেমে ঢাকে বোল তোলেন মমতা।