নিজস্ব প্রতিনিধি, বিধাননগর: ‘গোলাপি ও হলুদ ঘোড়া পাঠান। মেহমান আছে’। কেউ আবার বলছে, ‘সবুজ ঘোড়া পাঠিয়ে দিন’। এপার থেকে ফোন যাচ্ছে ওপারে। বরাত মিললেই রাতের অন্ধকারে সীমান্তের চোরাপথে বাংলাদেশ থেকে ভারতে পৌঁছে যাচ্ছে ‘রঙিন ঘোড়া’! এজেন্টের হাত ধরে পৌঁছে যাচ্ছে চোরাবাজারে। এমনই তথ্য হাতে পেয়েছেন গোয়েন্দারা। না, এই ঘোড়া জ্যান্ত ঘোড়া নয়। এ হল বিদেশি মাদক! ইয়াবা ট্যাবলেটের সাঙ্কেতিক নাম। সীমান্তে এই মাদকের কোটি কোটি টাকার কারবার চলছে। তবে চোরাপথে যাতে এই মাদক ভারতে না ঢোকে, তার জন্য সতর্ক রয়েছে বিএসএফ।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, ইয়াবা দেখতে হুবহু ট্যাবলেটের মতোই। তাই একে ইয়াবা ট্যাবলেটও বলা হয়। গোলাপি, হলুদ এবং সবুজ— এই তিন রঙের ইয়াবা ট্যাবলেট পাওয়া যায়। থাইল্যান্ড ও মায়ানমার থেকে এই মাদক ঢোকে বাংলাদেশে। সেখান থেকে চোরাপথে পৌঁছয় ভারতে। আকারে ছোট হওয়ায় এই ট্যাবলেট খুব সহজেই লুকিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। চোরাবাজারে এক-একটি ট্যাবলেটের পাইকারি মূল্য ১ হাজার টাকা। চোরাবাজারে তা খুচরো বিক্রি হয় ২ হাজার টাকারও বেশি দামে। দ্বিগুণ মুনাফা লোটে চোরাকারবারিরা। ক্রেতার চাহিদা বুঝে আরও দাম বাড়ানো হয়। সীমান্তের দু’পারেই এই কারবারের এজেন্ট রয়েছে। ওষুধের স্ট্রিপের মতোই এই ট্যাবলেটগুলি সাজানো থাকে। ফলে ব্যাগের মধ্যে লুকিয়ে খুব সহজেই কয়েক কোটি টাকার ইয়াবা ট্যাবলেট পাচার করা যেতে পারে।
দেখতে হুবহু ওষুধের মতো হলেও এই মাদক জল দিয়ে গিলে খাওয়া হয় না। জানা গিয়েছে, হেরোইনের নেশার মতোই ব্যবহার হয় এই ঘোড়া তথা ইয়াবা ট্যাবলেট। অ্যালুমিনিয়ামের ফয়েলের উপর রেখে নীচ থেকে তাপ দেওয়া হয়। সেই তাপে ‘ঘোড়া’ গলে ধোঁয়া বের হলে একটি নল দিয়ে টেনে নেশা করা হয়। খুব দ্রুত নেশার ঘোর লেগে যায় বলে চাহিদা বেশি। কেউ কেউ আবার এই ট্যাবলেট জল দিয়ে গুলে খেয়ে নেয়। তরুণ প্রজন্মের ছেলেদের পাাশাপাশি মেয়েদের হাতেও পৌঁছে যাচ্ছে এই মাদক। স্বাভাবিকভাবেই উদ্বেগ বাড়ছে।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, বাংলাদেশে এই মাদক ছেয়ে গেলেও ভারতে এখনও ইয়াবার ব্যবহার কম। কারণ, পাচারকারীরা চোরাপথে বেশি পরিমাণে মাদক পাঠাতে পারে না। তার উপর, সীমান্তে বিএসএফ জওয়ানরা এই মাদক রোধে কঠোর নজরদারি শুরু করেছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রচুর পরিমাণ ইয়াবা ট্যাবলেট ঢুকেছিল। কিন্তু তা চোরাবাজারে ছড়িয়ে পড়েনি। ঘোজাডাঙা সীমান্তের একটি জায়গায় মজুত করা ছিল। বিএসএফ নিজেদের সূত্রে খবর পেয়ে প্রায় ৭ কোটি টাকার ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করেছে। এগুলির এক-একটি ট্যাবলেটের পাইকারি দাম ছিল ১ হাজার টাকা।