চিন্ময় দাসের গ্রেফতারি-আইনজীবী খুন; 'অগ্নিগর্ভ' বাংলাদেশ নিয়ে কী বলছে হিন্দু সংগঠন?
আজ তক | ২৭ নভেম্বর ২০২৪
হিন্দু সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারিতে উত্তাল বাংলাদেশ। মঙ্গলবার নিরাপত্তা কর্মী ও চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় একজন আইনজীবী নিহত হন। বাংলাদেশের সংবাদপত্রে এই খবর প্রকাশিত হয়। চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে ২৫ নভেম্বর রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেফতার করে বাংলাদেশ সরকার। প্রতিবাদে চিন্ময় দাসের সমর্থকরা রাস্তায় নেমে সহিংস বিক্ষোভ শুরু করেন। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, এই ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ৬ জনকে আটক করা হয়।
আইনজীবীর মৃত্যু নিয়ে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্র ডেইলি স্টার জানায়, নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে সাংবাদিকসহ অন্তত ১০ জন জখম হন। ঢাকা ট্রিবিউন পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহত আইনজীবীর নাম সাইফুল ইসলাম (৩৫)। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগে কর্মরত ডাঃ নিবেদিতা ঘোষ বলেন, চট্টগ্রামের ষষ্ঠ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত রাজদ্রোহের অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া বিশিষ্ট হিন্দু নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের নিরাপত্তা কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তারপরই আইনজীবী মারা যান।
চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী জানান, আন্দোলনকারীরা সাইফুল ইসলামকে তাঁর চেম্বার থেকে টেনে হিঁচড়ে হত্যা করা হয়। চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে যখন পুলিশ ভ্যানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন তিনি হ্যান্ড মাইকের মাধ্যমে জনতাকে সম্বোধন করেন এবং তাদের শান্ত থাকার আহ্বান জানান। মঙ্গলবার বেলা ৩টার দিকে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও লাঠিচার্জ করে। চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার লিয়াকত আলি একজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে।
এদিকে এই ঘটনার পর বাংলাদেশের হিন্দু সংগঠেনর বিরুদ্ধে আঙুল ওঠে। আইনজীবী সাইফুল হত্যায় কোনও সনাতন জড়িত নয়, বিবৃতি জারি করে বাংলাদেশ সমিতি সনাতন জাগরণ জোট। তাদের তরফে জানানো হয় কোনও হিন্দু এই হত্যার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত নয়। বিবৃতিতে ওই সংগঠন আরও জানায়, আইনজীবী সাইফুল ইসলাম হত্যার সঙ্গে কোনও সনাতন জড়িত নয়। একটি দল পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে সনাতনীদের দোষারোপ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
সংগঠনটি এক বিবৃতিতে বলেছে, 'আমাদের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে আজ (২৬ নভেম্বর) আদালতে হাজির করা হয়। তাঁকে রাষ্ট্রদ্রোহের মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। আদালত চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মুক্তির দাবিতে আদালত চত্বরে বিক্ষোভ দেখান সাধারণ সনাতনীরা। জেল ভ্যানের সামনে শুয়ে পড়েন হাজারও সনাতনী। সেই সময় বাংলাদেশের পুলিশ, সেনাবাহিনী ও সীমান্তরক্ষীরা বিনা উসকানিতে সনাতনীদের উপর হামলা চালায়। তাদের পাশ থেকে গুলি চালানো হয় এবং গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়। এ সময় সনাতনীরা এদিক-ওদিক ছড়িয়ে পড়ে প্রাণ বাঁচাতে দৌড়াতে থাকে।
বাংলাদেশের সনাতন জাগরণ জোট আরও জানায়, 'সে সময় 'নারা-ই-তাকবীর' স্লোগান দিতে গিয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ও কিছু নাগরিক সনাতনীদের উপর হামলা করে এবং ইট-পাথর নিক্ষেপ করে। সনাতনীরা সবসময় অন্য ধর্মের উপাসনালয়কে সম্মান করে কোনও সনাতনী মসজিদে হামলা করেনি। বরং যারা নারা-ই-তাকবীরের স্লোগান দেয় তারাই মসজিদের জানালা দিয়ে পাথর ছুড়ে মারে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। পরে একটি গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে মসজিদে হামলা হয়েছে এবং অন্যান্য লোকজন জড়ো হয়েছিল। বিক্ষুব্ধ জনতা সনাতনীদের উপর হামলা চালায়।'
এদিকে বাংলাদেশে আইনজীবীর এই হত্যার ঘটনার পর ইসকন (ISKCON)-কে নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে বাংলাদেশে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তা নিয়ে বিভিন্ন পোস্ট করা হচ্ছে। তাদের অভিযোগ, ইস্কন সন্ত্রাসে মদত দিচ্ছে। ইস্কন একটি ধর্মীয় মৌলবাদী সংগঠন। এই মর্মে রিট পিটিশন দায়ের হয় বাংলাদেশের হাইকোর্টে।
এদিকে ইসকনের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ নিয়ে সরব হয়েছে সমিতি সনাতন জাগরণ জোট। তাদের তরফে বলা হয়, 'ইসকন একটি ভালো সংগঠন। তারা শান্তির পক্ষে বার্তা দিয়ে থাকে। তাহলে তাদের নিষিদ্ধ করার দাবি কেন উঠছে। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।'