• লেভেল থেকে হলোগ্রামের হুবহু নকল, নামি-দামি ব্র্যান্ডের নকল মদের রমরমা
    বর্তমান | ২৮ নভেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: বড়দিন ও ইংরেজি নববর্ষের আগে নকল বিলাতি মদের জোগান নিয়ে উদ্বিগ্ন পূর্ব মেদিনীপুর জেলা আবগারি দপ্তর। লেবেল থেকে হলোগ্রাম, সবই হুবহু এক। শুধু তাই নয়, ওই নামী ব্র্যান্ডের মদের মতোই রং এবং গন্ধও এক। নিউ ইয়ারের বাজার ধরতে নকল মদ প্রস্তুতকারক ও সাপ্লায়াররা কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে। সম্প্রতি এগরা থানার গোপীনাথপুর গ্রামে গণেশচন্দ্র দাস নামে একজনকে এরকম পাঁচটি বোতল সহ গ্রেপ্তার করেন আবগারি দপ্তরের ওসি। তাকে জেরা করে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাঁতনের নন্দকুড়িয়া গ্রাম থেকে গৌরাঙ্গ জানা নামে একজনকে পাকড়াও করা হয়। তার বাড়ি থেকে ১৫০লিটার স্পিরিট উদ্ধার হয়। নকল মদ প্রস্তুত করতে ওই স্পিরিট কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হতো বলে মনে করা হচ্ছে। গৌরাঙ্গকে জেরা করে রামনগর থানা এলাকা থেকে পঙ্কজ বেরা নামে আরও একজনকে গ্রেপ্তার করেছে আবগারি দপ্তর। তার কাছ থেকে আট বোতল নকল বিদেশি মদ পাওয়া গিয়েছে। ওইসব বিদেশি মদের কেমিক্যাল টেস্টিংয়ের জন্য পাঠিয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা আবগারি দপ্তর।


    নকল বিদেশি মদের বোতল সামনে আসতেই এর শিকড় খুঁজতে টিম তৈরি করে অভিযানে নেমেছে জেলা আবগারি দপ্তর। ওই মদ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে সরকারি রাজস্ব মার খাবে। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হল, নকল মদ থেকে বিপদের আশঙ্কা রয়েছে। আসল এবং নকলের মধ্যে বিশেষ পার্থক্য‌ না থাকায় ক্রেতাদের ঠকানো সহজ। তাই এর উৎস খুঁ‌঩জতে টিম তৈরি করে অভিযান চলছে। সম্প্রতি কোলাঘাট থানার সিদ্ধায় ১৬নম্বর জাতীয় সড়কে ইথানল স্পিরিটবাহী ট্যাঙ্কার থেকে ইথানল বের করার ঘটনা ঘটে। গত ২৮অক্টোবর ওই ঘটনায় আবগারি দপ্তরের বিশেষ অভিযানে তিনজন ধরা পড়ে। নকল মদ কারবারিরা এরসঙ্গে জড়িয়ে থাকতে পারে বলে তদন্ত শুরু করে আবগারি দপ্তর। তারপরই আবগারি দপ্তরের নজরে আসে নকল বিদেশি মদের বোতল। ডিসেম্বর মাসে মদের বিক্রি বাড়ে। শীতের শুরুতে দীঘা সহ পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে জনসমাগম বাড়ে। বড়দিন, নিউ ইয়ার উপলক্ষ্যে মদের দোকানে সুরাপায়ীদের লাইন পড়ে যায়।


    বিদেশি নকল মদ দুই মেদিনীপুর জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এগরা থানার গোপীনাথপুর গ্রামে প্রথমে ওই নকল বিদেশি মদ সামনে আসে। ধৃত গণেশকে জেরা করতেই দাঁতনের গৌরাঙ্গর নাম জানতে পারে আবগারি দপ্তর। এরপর দুই মেদিনীপুর জেলা আবগারি দপ্তরের বিশেষ টিম গৌরাঙ্গকে পাকড়াও করে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় মদের চাহিদা বেশি। এখানে প্রতিদিন চার-সাড়ে চার কোটি টাকার মদ বিক্রি হয়। বিশেষ দিনে সেটা দৈনিক পাঁচ কোটি ছাড়িয়ে যায়। সেই চাহিদার কথা মাথায় রেখেই বিলাতি মদের লেবেল, হলোগ্রাম এবং সিল করা ছিপি হুবহু করে বাজারে আনা হয়েছে। খুচরো মদ বিক্রেতাদের হাতে নকল মদের বোতল তুলে দেওয়া হয়েছে।


    পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় আবগারি দপ্তরের সুপার মণীশ শর্মা বলেন, নকল বিদেশি মদের বোতল আসলের মতো দেখতে। আসল-নকল তফাত করা কঠিন। বিষয়টি নজরে আসার পর আমরা ভীষণ গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। ইতিমধ্যেই তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এধরনের ১৩টি বোতল পাওয়া গিয়েছে। কেমিক্যাল টেস্টিংয়ে পাঠানো হয়েছে।
  • Link to this news (বর্তমান)