প্রধানশিক্ষকের অদম্য চেষ্টা, চিকিৎসকের হাতযশ, পূর্ণ দৃষ্টিশক্তি ফিরল ইউসুফের
বর্তমান | ২৮ নভেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, রানাঘাট: জন্ম থেকেই দুর্বল দৃষ্টিশক্তি। স্কুলের প্রথম বেঞ্চে বসেও ব্ল্যাকবোর্ডের লেখা দেখতে পেত না খুদে ইউসুফ। পরিবারের লোকজন ধরেই নিয়েছিলেন সুস্থ সন্তান আসেনি তাঁদের কোলে। ছোট্ট ইউসুফ বিশেষভাবে সক্ষম বলে সান্ত্বনা খুঁজছিলেন সকলেই। তবে, পরিবার হাল ছেড়ে দিলেও হাল ছাড়েননি স্কুলের হেডস্যার। তাঁরই অদম্য চেষ্টায় আজ পূর্ণ দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেয়েছে চতুর্থ শ্রেণিতে পাঠরত ইউসুফ। অসাধ্য সাধন করেছে শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতাল। স্বল্প পরিকাঠামোর উপর করে সফল অস্ত্রোপচারে নজির গড়ল তারা।
শান্তিপুরের গোপালপুর মুসলিমপাড়ার বাসিন্দা রোজিনা বিবির একমাত্র সন্তান ইউসুফ আলি শেখ। বয়স মাত্র ১০ বছর। স্থানীয় কাজি নজরুল বিদ্যাপীঠের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা পড়ানোর সময় বুঝতে পারেন, ইউসুফের দৃষ্টিশক্তি অত্যন্ত দুর্বল। বিষয়টি নজরে আসতেই প্রথম উদ্যোগ নেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তপন রায়। তিনি বারবার পরিবারের লোকজনকে বলেন চিকিৎসা করাতে। কিন্তু, নানা কুসংস্কারের কারণে চিকিৎসার পথে হাঁটতে চায়নি ইউসুফের পরিবার। বরং তারা বিষয়টিকে সমস্যা হিসেবেই মেনে নিয়েছিলেন। প্রস্তুত ছিলেন ছেলেকে বিশেষভাবে সক্ষম হিসেবেই বড় করার। এমতাবস্থায়, প্রধান শিক্ষক ঠিক করেন স্কুলে আয়োজিত একটি আই ক্যাম্পে শিশুটির চোখ পরীক্ষা করাবেন। কিন্তু ওইদিন স্কুলে অনুপস্থিত ছিল ইউসুফ। প্রধান শিক্ষক তাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেন। চক্ষু পরীক্ষায় দেখা যায়, জন্মগত ছানি রয়েছে শিশুটির। অর্থাৎ, ছানি কাটানোর ব্যবস্থা করলে স্পষ্ট দৃষ্টি ফিরে পাবে সে। এরপর পরিবারের লোককে বুঝিয়ে খুদে ওই পড়ুয়াকে তিনি ভর্তির ব্যবস্থা করেন শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। তপনবাবুকে সাস জোগায় চক্ষু বিভাগের সার্জেন ডাঃ প্রদীপ দাস। তিনি কিছুটা ঝুঁকি নিয়েই ইউসুফের চোখ অপারেশনে উদ্যোগী হন। অস্ত্রোপচার সফল হয়। আজ দৃষ্টি ফিরে পেয়েছে ইউসুফ। প্রদীপবাবু বলছিলেন, ‘আমি প্রথম থেকেই দেখছিলাম শিশুটির নিজের দেখার ইচ্ছা প্রবল। যেখানে একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষকেও অপারেশনের সময় বিভিন্নভাবে আমাদের অভয় দিতে হয়। সেখানে ওই শিশুটি অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় আমাদের সাহায্য করে গিয়েছে। এত ছোট ছেলের ছানি অপারেশন স্টেট জেনারেল হাসপাতালে আমি আগে করিনি। স্কুলের প্রধান শিক্ষক ওর দৃষ্টিশক্তি ফেরাতে আপ্রাণ চেষ্টা করে গিয়েছেন।
সফল অস্ত্রোপচারের পর ইউসুফের বাড়িতে যান প্রধান শিক্ষক তপনবাবু। ছাত্রের খোঁজখবর নিয়ে ফিরে আসেন। তিনি বলেন, ‘একজন শিক্ষকের কাজ মানুষ তৈরি করা। আমার অনেক ছাত্রছাত্রীর মধ্যে একজন এই বর্ণময় পৃথিবী দেখতে পাবে না, এটা মেনে নিতে পারিনি। তাছাড়া চিকিৎসার যখন সুযোগ রয়েছে তা হলে কেন তাকে হাতছাড়া করব। ইউসুফ দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেতে আমাদেরও ভালো লাগছে।’ - নিজস্ব চিত্র