• বিয়ের মরশুমে চিন্তায় প্রশাসন, এবার রূপশ্রীর টাকা হাতাতে সক্রিয় চক্র
    বর্তমান | ২৮ নভেম্বর ২০২৪
  • সংবাদদাতা, রামপুরহাট: এর আগে মহিলাদের নববধূ সাজিয়ে লক্ষ লক্ষ সরকারি অর্থ আত্মসাতের ঘটনা সামনে এসেছিল। চাকরি খুইয়েছিলেন রূপশ্রী প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা দুই চুক্তিভিত্তিক কর্মী। এবার জাল সার্টিফেকেট তৈরি করে নাবালিকাকে সাবালিকা দেখিয়ে এই প্রকল্পে টাকা চেয়ে আবেদন জমা পড়ছে। বিয়ের মরশুম শুরু হতেই সক্রিয় হয়ে উঠছে এই ধরনের জালিয়াত চক্র। ইতিমধ্যে ব্লকগুলিকে সজাগ থাকার নির্দেশ পাঠিয়েছেন জেলাশাসক বিধান রায়। তিনি বলেন, ‘সরকারি নিয়মের শিথিলতার কোনও প্রশ্নই নেই।  কোথাও অনিয়ম হলে বিভাগীয় তদন্তের  পাশাপাশি আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 


    রূপশ্রী প্রকল্পে প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের বিয়ের জন্য এককালীন ২৫ হাজার টাকা দেয় রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যয়ের সরকারের একাধিক সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের মধ্যে এটি অন্যতম। বিয়ে ঠিক পূর্বে বাবা কিংবা মায়ের আবেদনের ভিত্তিতে সেই টাকা পেতে পারেন। কিন্তু গরিব, লেখাপড়া না জানা মানুষদের অসহয়তার সুযোগ নিয়ে রূপশ্রীর টাকা আত্মসাৎ করতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে দালালচক্র। অসাধু উপায়ে বাবা-মা’কে নান টোপ দিয়ে সরকারি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি। নিয়মানুযায়ী, আবেদনকারীর বাড়িতে এসে পরিবার ও প্রতিবেশীদের কাছে তদন্ত করার পরই এই প্রকল্পের সুবিধা প্রদান করা হয়। কিন্তু করোনা কালে সংক্রমণের আশঙ্কায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সরকারি কর্মীদের অনেকেই তদন্তে না এসে যোগ্য বলে অনুমোদন করে দিয়েছিলেন। সুযোগটাকে কাজে লাগিয়েছিল এক শ্রেণির অসাধু মানুষ। কোথাও আঠারো বছরের আগে বিবাহিত মহিলারা এই প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছেন। কোথাও আবার বিবাহিত মহিলাকে নববধূ সাজিয়ে, আবার কোথাও স্বামীকে পাত্র দেখিয়ে কার্ড ছাপিয়ে আবেদন করে সুবিধা ভোগ করেছেন। ২০২২ সালে নলহাটি ২ ব্লকে এই প্রকল্পে এমনই জালিয়াতি কাণ্ড নিয়ে হইচই পড়ে গিয়েছিল। সামনে আসে দালাল চক্র। উপভোক্তা ও দালাল চক্র টাকা ভাগাভাগি শর্তে সরকারি অর্থ লোপাট করেছে। তদন্তে নেমে প্রশাসনিক কর্তারা উপভোক্তাদের বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর করেন। যদিও গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়ে ৪৫ জন উপভোক্তা সরকারকে টাকা ফেরত দেন। মুরারই ১ ও রামপুরহাট ১ ব্লকেও এমন ঘটনা ঘটেছে। 


    এবার কৌশল বদল করে এই প্রকল্পের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। যেমন, ময়ূরেশ্বর ১ ব্লকে ঘটেছে। এই ব্লকের দক্ষিণগ্রামের এক ব্যক্তি সম্প্রতি তাঁর মেয়ের বিয়ের জন্য প্রকল্পের সুবিধা চেয়ে আবেদন করেছেন। সেক্ষেত্রে মেয়ের বয়সের সার্টিফিকেটে লেখা রয়েছে ১৮ প্লাস। ভেবেছিলেন হয়তো কেউ তদন্তে আসবে না। কিন্তু সরকারি কর্মীরা বাড়িতে এসে পাত্রীকে দেখে সন্দেহ প্রকাশ করেন। জানতে পারেন পাত্রী নাবালিকা। বয়স ১৫। এই ব্লকের রূপশ্রী প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা সরকারি কর্মী অমিত রজক বলেন, ‘নাবালিকার তিনবছর বয়স বাড়িয়ে সাবালিকা দেখিয়ে আবেদন করা হয়েছিল। বিষয়টি বিডিও সাহেব দেখছেন।’ অন্যদিকে বিডিও আবুল আলম মাবুদ আনসারি বলেন, ‘ওই আবেদনটি বাতিল করা হবে। সেই সঙ্গে আইনি পদক্ষেপের বিষয়টি দেখছি।’  প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘দুঃস্থ , অশিক্ষিত মানুষ এভাবে সরকারের সঙ্গে জালিয়াতি করার সাহস দেখাবে না। এর পিছনে নিশ্চয় কোনও চক্র কাজ করছে। সেই সঙ্গে সরকারি কর্মীদের কেউ জড়িত রয়েছে  কিনা সেটাও দেখা হচ্ছে।  প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার ১৯ টি ব্লক ও ছ’টি পুরসভা মিলিয়ে এই প্রকল্পের সুবিধা চেয়ে প্রচুর আবেদন জমা পড়েছে। জেলাশাসক বলেন, ‘উপভোক্তার নামের তালিকা ধরে খোঁজখবর করে প্রকৃত প্রাপক কি না, সেব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার পরই অর্থ অনুমোদনের জন্য রাজ্যে নাম পাঠাতে বলা হয়েছে ব্লকগুলিকে।  
  • Link to this news (বর্তমান)