সুমন মুখোপাধ্যায়, সিউড়ি: শুকিয়ে গিয়েছে তিলপাড়া ব্যারেজের ময়ূরাক্ষী নদীর জল। তাই শীতের মরশুমে দেখা নেই পরিযায়ী পাখিদের। আকর্ষণ বাড়ছে নীল নির্জন জলাধারের। প্রতিবছর নভেম্বর মাস পরের বছরের মার্চ মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত পরিযায়ী পাখির দল আসা যাওয়া করে। কিন্তু এবছর সিউড়ির তিলপাড়া ব্যারেজ সংস্কারের জন্য ময়ূরাক্ষী নদীর সমস্ত জল ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে, শীতকালে জলশূন্য হয়ে পড়েছে সিউড়ির ময়ূরাক্ষী নদী। জল না থাকায় আসবে না পরিযায়ী পাখির দল, এমনটাই মনে করছেন পরিবেশবিদরা। সিউড়ি থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত নীলনির্জন জলাধারে ভিড় জমাতে পারে পরিযায়ী পাখিরা। সেচ দপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, শীঘ্রই তিলপাড়া ব্যারেজ সংস্কারের কাজ শুরু হবে। সে জন্য বাধ্য হয়ে ব্যারেজের জমা জল ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
পরিবেশবিদরা বলেন, ভারতের উত্তর-পশ্চিমে হিমালয়ের পার্বত্য এলাকা থেকে শীতের শুরুতে গাঙ্গেও সমভূমিতে উড়ে আসে, ‘বার হেডেড গুজ’ (দাগি রাজ হাঁস), রেড ক্রেস্টেড পচারড (রাঙা মুড়ি হাঁস), বিশেষ প্রজাতির পানকৌড়ি। এছাড়াও জলাভূমি নির্ভর পাখিরা আসত ময়ূরাক্ষী নদীতে। বাধ্য হয়ে পাখির দল নীল নির্জন, বল্লভপুর সহ একাধিক জলাধারে ভিড় জমাচ্ছে।
স্থানীয় এক বাসিন্দা সুস্মিতা নন্দী বলেন, শীতকালে তিলপাড়া ব্যারেজে আমরা প্রায়শই বিকেলে ঘুরতে যেতাম। তখন বিভিন্ন পরিযায়ী পাখির ছবিও তুলতাম। কিন্তু এবছর দু’একদিন আগে গিয়ে দেখি ব্যারেজ জলশূন্য হয়ে পড়েছে। ফলে পরিযায়ী পাখিও নেই। শুধুমাত্র কয়েকটি সাদা বক খাবারের আশায় নদীতে রয়েছে। আমরা খুবই হতাশ হয়েছি। আশা করব আগামী বছর আবার পরিযায়ী পাখিরা এই ব্যারেজের জলে ভিড় জমাবে। আর আমরা ছবিও তুলতে পারব।
এবিষয়ে বন্যপ্রাণ অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ব্যুরোর সদস্য দীনবন্ধু বিশ্বাস বলেন, দেশ-বিদেশ থেকে এই শীতের মরশুমে বিভিন্ন পরিযায়ী পাখি আমাদের ময়ূরাক্ষী নদীতে আসত। কিন্তু এবছর জল না থাকায় তারা এখানে নামেনি। এই পরিযায়ী পাখিদের নির্দিষ্ট একটি জলাশয় থাকে। প্রতিবছর তারা সেখানেই এসে ভিড় জমায়। কিন্তু এ বছর সেই অবস্থা নেই। পাখিরা আশেপাশের জলাশয়ে যেতে পারে। কিন্তু তাতে সমস্যা বাড়বে। কারণ ওই জলাশয়ে আগে থেকেই যে সমস্ত পরিযায়ী পাখি এসেছে বা আসবে, তাদের মধ্যে খাবার, বাসস্থান নিয়ে সংঘাত সৃষ্টি হতে পারে। এবছর ফিরে যাওয়া পরিযায়ী পাখির দল আগামীবার এখানে আসবে কিনা, তাও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ব্রিজের সংস্কারও জরুরি। - নিজস্ব চিত্র