জনগণের আস্থা ফেরানোই লক্ষ্য শাসকদলের, ‘সরাসরি পুরপ্রধান’ কর্মসূচি বাঁকুড়া পুরসভায়
বর্তমান | ২৮ নভেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁকুড়া: সাধারণ মানুষের আস্থা ফেরাতে এবার ‘সরাসরি পুরপ্রধান’ কর্মসূচি চালু করতে চলেছে বাঁকুড়া পুরসভা। ওই কর্মসূচির মাধ্যমে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে পুরকর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। কর্মসূচির প্রাথমিক ধাপ হিসেবে সোমবার থেকে পুরসভার তরফে একটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর (৮২৫০৭১৩৯৫৬) চালু করা হচ্ছে। সেখানে পুর পরিষেবা সংক্রান্ত যে কোনও সমস্যার কথা শহরের বাসিন্দারা জানাতে পারবেন। ২৪ঘণ্টার মধ্যে তা খতিয়ে দেখে পুরসভার চেয়ারপার্সন পদক্ষেপ নেবেন। আগামী সোমবার থেকে ওই নম্বর চালু হচ্ছে।
তবে আপাতত ওই নম্বরে শুধুই মেসেজ করে অভিযোগ বা মতামত জানানো যাবে। তাতে ফোন কলের সুবিধা থাকবে না। পরবর্তী পর্যায়ে ‘টক টু চেয়ারম্যান’ বা ‘জনতার দরবার’ জাতীয় কর্মসূচি শুরু করা হবে। তখন সরাসরি চেয়ারম্যানের কাছে সাধারণ মানুষ নিজেদের সমস্যার কথা তুলে ধরতে পারবেন।
উল্লেখ্য, গত লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে শহুরে ভোটারের বড় অংশ তৃণমূলের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। বেশিরভাগ পুরসভায় শাসকদল পিছিয়ে পড়েছিল। তার ফায়দা তুলেছে বিজেপি। গত বিধানসভা নির্বাচনেও রাজ্যের শহরকেন্দ্রিক বিধানসভায় গেরুয়া শিবির সাফল্য পেয়েছিল। বাঁকুড়া শহরও এর ব্যতিক্রম নয়। এর পিছনে পুরসভাগুলির পরিষেবার মান নিয়ে নাগরিকদের অসন্তোষ অন্যতম কারণ বলে রাজনৈতিক মহলের অভিমত। এদিকে আগামী বিধানসভা নির্বাচন আর বেশি দেরি নেই। তার আগে ‘ড্যামেজ কন্ট্রোলের’ জন্যই বাঁকুড়া পুরসভা এই উদ্যোগ নিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের অভিমত। শাসকদলের তরফে অবশ্য উন্নয়নের ধারাবাহিক কর্মসূচির অঙ্গ হিসেবেই এই উদ্যোগকে দেখা হচ্ছে। তবে বিরোধীরা বিশেষ করে বিজেপি এনিয়ে তৃণমূল পরিচালিত পুর বোর্ডকে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না।
বাঁকুড়া পুরসভার চেয়ারপার্সন অলকা সেন মজুমদার বলেন, মা-মাটি-মানুষের সরকার সাধারণ মানুষের জন্য নিরলস কাজ করে চলেছে। আমরাও সরকারেরই অঙ্গ। ফলে বাসিন্দাদের জন্য কাজ করার ক্ষেত্রে কোনও খামতি রাখতে চাই না। তবে অনেক সময় বহু জিনিস আমাদের অজ্ঞাতে ঘটে যায়। তারফলে বাসিন্দারা সমস্যায় পড়েন। অথচ সময়ে জানলেই ওইসব সমস্যার সিংহভাগ প্রতিকার করা যেতে পারে। এদিকে, আবার সকলের পক্ষে লিখিতভাবে সবকিছু পুরসভার গোচরে আনা সম্ভব হয় না। তার ফলেই আমরা হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর চালুর উদ্যোগ নিই। বর্তমানে প্রতিটি পরিবারেই কারও না কারও কাছে অ্যান্ড্রয়েট মোবাইল রয়েছে। ফলে বাড়ি বা ওয়ার্ডের পুর পরিষেবা সংক্রান্ত সমস্যা মুহূর্তের মধ্যে বাসিন্দারা জানাতে পারবেন। সমস্যা সম্বলিত ছবি বা ভিডিও সংশ্লিষ্ট নম্বরে পাঠানো যেতে পারে।
চেয়ারপার্সন আরও বলেন, দিনে দু’দফায় আমি জমা পড়া সমস্যাগুলি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠিয়ে দ্রুত প্রতিকারের নির্দেশ দেব। রাতে জমা পড়া সমস্যা পরদিন সকালে অফিস খোলার পর খতিয়ে দেখা হবে। কোনও দপ্তর নির্দেশ পাওয়ার পরও কাজ না করলে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা সুভাষ সরকার বলেন, তৃণমূল পরিচালিত পুরসভাকে মানুষ মন থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। সবুজায়ন ও অম্রুত প্রকল্পে টাকা নয়ছয় করা হয়েছে। স্বচ্ছ প্রশাসন ও পরিচ্ছন্ন শহর দিতে পুর কর্তৃপক্ষ ব্যর্থ হয়েছে। অলকাদেবী বলেন, আগামী বিধানসভায় বাঁকুড়া শহরের বাসিন্দারা বিজেপিকে কুৎসা ও অপপ্রচারের জবাব দেবেন।