• ভেটাগুড়ির বিখ্যাত জিলিপি কিনতে রাসমেলায় লম্বা লাইন
    বর্তমান | ২৮ নভেম্বর ২০২৪
  • রাজীব বর্মন, দেওয়ানহাট: কোচবিহারের শতাব্দীপ্রাচীন রাজআমলের রাসমেলায় খাবারের কথা উঠলেই যার নাম প্রথমেই আসে সেটা হল ভেটাগুড়ির বিখ্যাত রসালো জিলিপি। ২০০ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী কোচবিহারের রাসমেলায় এসেছেন অথচ ভেটাগুরির বিখ্যাত জিলিপি মুখে তোলেননি এমন মানুষ নেই বললেই চলে। আমজনতা থেকে প্রশাসনিক কর্তা, জনপ্রতিনিধিরাও মুখিয়ে থাকেন রাসমেলার এই মুচমুচে জিলিপি খেতে। 


    মেলায় ভেটাগুড়ির জিলিপির পাশাপাশি আরও অনেক জিলিপির দোকান আছে। হরেক নামে মিষ্টি বিক্রেতারা তাঁদের জিলিপি নিয়ে এলেও সাবাইকে পিছনে ফেলে এখনও রাসমেলার সেরার সেরা ভেটাগুড়ির জিলিপি। ফলে মেলার আসা দর্শনার্থীদের কাছে ভেটাগুড়ির জিলিপির বিশেষ কদর আছে। প্রতিদিনই দুপুর থেকে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত, ভেটাগুড়ির জিলিপির দোকানের সামনে রীতিমতো লাইন। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে মুচমুচে জিলিপি কিনতে অপেক্ষা করেন সকলেই। 


    মেলার শুরুতে প্রতিদিন ৮-৯ কুইন্টাল জিলিপি বিক্রি হলেও বর্তমানে প্রতিদিন ২২-২৩ কুইন্টাল বিক্রি হচ্ছে বলে জানান দোকান মালিক অসিত নন্দী। গতবছরের মতো এ বছরও ১৪টি উনুনে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত জ্বলছে। ভাজা হচ্ছে জিলিপি। এই দোকানের প্রতিষ্ঠাতা বিধুবাবুর পুরানো ফর্মুলায় আজও তৈরি হয় এই  জিলিপি। একশো বছরের বেশি সময় আগে রাসমেলার পাশাপাশি ভেটাগুড়িতে একটি জিলিপির দোকান খুলেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা বিধুভূষণ নন্দী। সেটি প্রায় ছয় দশক আগে বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে তাঁর পরিবারের উত্তরসূরীরা কেউ মিষ্টির ব্যবসা না করলেও পূর্বপুরুষের স্মৃতিকে ধরে রাখতে ঐতিহ্যের কথা মাথায় রেখে তাঁদের শতাব্দীপ্রাচীন নিজস্ব ফর্মুলায় তৈরি জিলিপির পসরা নিয়ে প্রতিবছর রাসমেলায় হাজির হন। 


    কোচবিহার রাসমেলা উত্তরবঙ্গ তো বটেই উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি বড় প্রাচীন মেলা। এ বছর মেলার ২১২ বছর। ১৮১২ সালে ভেটাগুড়ি থেকেই প্রথম রাসমেলার শুরু। ওই বছর রাসপূর্ণিমা তিথিতে কোচবিহারের মহারাজ হরেন্দ্রনারায়ণ ভেটাগুড়িতে নবনির্মিত রাজপ্রাসাদে প্রবেশ করেন। সেই উপলক্ষে ভেটাগুড়িতে প্রথম রাসমেলা বসে। পরিবর্তীতে কোচবিহার শহরের মদনমোহন বাড়িতে রাস উৎসব ঘিরে রাসমেলা বসে মন্দির সংলগ্ন মাঠে। সেই সময় থেকে আজও সেই মেলা চলছে। 


    দোকান মালিক অসিত নন্দী বলেন, আমার ঠাকুরদা বহু বছর আগে ভেটাগুড়িতে মিষ্টির দোকান করেছিলেন। সেই সময়েই তিনি জিলিপি বিক্রি করতেন। আমাদের জিলিপি সেই সময়কার ফর্মুলা মেনেই এখনও তৈরি করা হয়। ভেটাগুড়ির জিলিপি তৈরির উপকরণ ও রস তৈরির ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। সেসব আমরা এখনও অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলি। এখন আমাদের পরিবারে আর কেউ মিষ্টির ব্যবসা করেন না। কিন্তু পুরনো ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে রাসমেলার সময়ে আমরা এখনও জিলিপি বিক্রি করি। মেলায় গড়ে প্রতিদিন ২২-২৩ কুইন্টাল করে জিলিপি বিক্রি হচ্ছে। - নিজস্ব চিত্র।
  • Link to this news (বর্তমান)