• সিতাই কংগ্রেসকে ছাড়া উচিত ছিল, মত সিপিএমে
    আনন্দবাজার | ২৮ নভেম্বর ২০২৪
  • রাজ্যে ছয় কেন্দ্রের উপনির্বাচনে এ বার আলাদা লড়াই করেছে বাম ও কংগ্রেস। তবে উপনির্বাচনের ফলপ্রকাশের পরে বাম ও কংগ্রেসের সমঝোতার সওয়াল আবার উঠতে শুরু করেছে দুই শিবিরেই। ফলাফলের প্রাথমিক ব্লিশেষণে সিপিএমও মনে করছে, শরিকদের দাবির কাছে মাথা নত না-করে অন্তত সিতাই বিধানসভা আসন কংগ্রেসকেই ছেড়ে দেওয়া উচিত ছিল।

    যে ছয় কেন্দ্রে সম্প্রতি উপনির্বাচন হয়েছে, তার মধ্যে সিতাই কেন্দ্রে গত ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে লড়েছিল কংগ্রেস। এ বারও উপনির্বাচনে সেই একই সূত্র মেনে এগোনো যায় কি না, সেই চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু তার আগেই বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লক ওই আসনে লড়বে বলে বামফ্রন্টে ঠিক হয়েছিল। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার এবং কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য অধীর চৌধুরী বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুর সঙ্গে কথা বললেও ফ ব তাদের দাবি থেকে সরতে নারাজ ছিল। শেষ পর্যন্ত আলাদা লড়ে কোচবিহারের ওই আসনে ফ ব পেয়েছে তিন হাজার ৩১৯ ভোট আর কংগ্রেস আগের চেয়ে ভোট বাড়িয়ে এ বার পেয়েছে ৯ হাজার ১৭৭। সিপিএম সূত্রের খবর, দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে উপনির্বাচনের ফল নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। তাতে উঠে এসেছে, কোচবিহারের সিতাই বাম শরিক ফ ব-কে বা আলিপুরদুয়ারের মাদারিহাট আরএসপি-কে লড়তে দিয়ে কোনও লাভ হয়নি। দুই কেন্দ্রেই সামান্য ভোট এসেছে। শাসক দলের ‘গা-জোয়ারি’র মধ্যে লড়ে সিতাইয়ে কংগ্রেস ভোট বাড়িয়েছে। সেখানে আনুষ্ঠানিক ভাবে দু’পক্ষের সমঝোতা থাকলে ভোট আরও বাড়তে পারতো।

    মেদিনীপুর ও তালডাংরা আসনে এ বার বামেদের ভোট কিছুটা বেড়েছে লোকসভা নির্বাচনের তুলনায়। সেখানে সংগঠন বেশি পরিশ্রম করেছে বলে প্রাথমিক রিপোর্ট পেয়েছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। মেদিনীপুরে প্রার্থী ছিল বাম শরিক দল সিপিআইয়ের। অন্য দিকে, হাড়োয়া ও নৈহাটি— উত্তর ২৪ পরগনার দুই আসনই ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল বামফ্রন্টের বাইরের দু’দলের জন্য। নৈহাটিতে লড়েছে সিপিআই (এম-এল) লিবারেশন, সেখানে বাম ভোট লোকসভার তুলনায় প্রায় অর্ধেক হয়েছে। হাড়োয়ায় ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ) দ্বিতীয় হয়েছে ঠিকই, কিন্তু লোকসভা নির্বাচনে ওই বিধানসভা এলাকায় সিপিএম এবং আইএসএফ মিলে যে ভোট পেয়েছিল, তা এ বার আসেনি। যদিও উপনির্বাচনে ভোটের ‘সুস্থ পরিবেশ’ ছিল না বলে অভিযোগ আছে, তবু সাংগঠনিক ‘নিষ্ক্রিয়তা’র দিকে নজর দেওয়ার কথা বলছেন সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব। ভোট বৃদ্ধি না হওয়ার কারণ খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইএসএফ-ও।

    সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, ‘‘এই উপনির্বাচনের ফল থেকে কোনও সিদ্ধান্তে আসা যায় না। তার মধ্যেও বোঝা যাচ্ছে, সিতাই আসন কংগ্রেসকে ছেড়ে দিলেই ভাল হত। আমাদের দিক থেকে কিছুটা শিথিলতা ছিল, কংগ্রেসের প্রস্তাব আসতেও দেরি হয়েছে। তবে বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ সব শক্তিকে একসঙ্গে নিয়ে চলার পথ থেকে আমরা সরিনি।’’ সূত্রের খবর, সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠক ডাকা হচ্ছে ৩০-৩১ ডিসেম্বর। সেখানে উপনির্বাচনের পর্যালোচনার পাশাপাশি সম্মেলন-পর্ব নিয়ে আলোচনা হবে।

  • Link to this news (আনন্দবাজার)