বিধানসভা থেকে বিজেপি বিধায়কেরা বুধবার দল বেঁধে গিয়েছিলেন কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাই-কমিশনারের দফতর অভিযানে। রবীন্দ্র সদন পর্যন্ত বাসে গিয়ে সেখান থেকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে মিছিল করে ডেপুটি হাই-কমিশনের দিকে গিয়েছিেন বিজেপি বিধায়কেরা। পথে ৬টি ব্যারিকেড ছিল পুলিশের। বিরোধী নেতা-সহ ৮ জন বিধায়ককে ডেপুটি হাই-কমিশনের ভিতরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। দাবিপত্র দিয়ে বেরিয়ে শুভেন্দু বলেছেন, ‘‘চিন্ময় প্রভু কোনও অপরাধ করেননি। কোনও অপরাধ আদালতে প্রমাণ হয়নি। তার পরেও তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অবিলম্বে তাঁকে মুক্তি দিতে হবে। ডেপুটি হাই-কমিশনার আমাদের বক্তব্য শুনেছেন। আমাদের পরামর্শ নিয়েছেন। আমরা উদ্বেগ ব্যক্ত করেছি। ওঁরা দিল্লির দূতাবাসের সঙ্গে কথা বলে ওঁদের দেশের বিদেশ দফতরে জানাবেন।’’ বাংলাদের অন্তর্বর্তী প্রশাসক মহম্মদ ইউনূসের সঙ্গে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এক বন্ধনীতে এনে তীব্র আক্রমণও করেছেন শুভেন্দু।
বনগাঁর পেট্রাপোল সীমান্তে আগামী ২ ডিসেম্বর বিক্ষোভ-জমায়েতেরও ডাক দিয়েছে বিজেপি। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, রবিবারের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি না-হলে পেট্রাপোল সীমান্তে পণ্যবাহী ট্রাক আটকে দেওয়া হবে। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপরে নির্যাতনের প্রতিবাদে এবং চিন্ময় দাসের মুক্তির দাবিতে এ দিনই বনগাঁ শহরের বাটার মোড়ে ‘সনাতনী ঐক্য মঞ্চে’র তরফে যশোর রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের দাবি, ইউনূস সরকার আসার পর থেকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপরে অত্যাচার বেড়েছে। বাটার মোড়ে থেকে এ দিন মিছিল শুরু করে বনগাঁ মতিগঞ্জ ঘুরে ফের বাটার মোড়ে এসে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন ‘সনাতনী ঐক্য মঞ্চে’র সদস্যেরা।
শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ অবশ্য বলেছেন, ‘‘এটা একেবারেই আন্তর্জাতিক বিষয়। এখানে রাজ্য সরকারের কিছু করার নেই। যা করার, তা নিশ্চয়ই কেন্দ্রীয় সরকার করবে। তবে রাজ্যে বিজেপি নেতাদের সেখানকার উত্তেজনা এখানে টেনে আনা উচিত নয়। কিছু বলার থাকলে তাঁরা দিল্লিতে গিয়ে বলতে পারেন।’’
পড়শি দেশের পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে বালিগঞ্জের ইস্কন মন্দির থেকে বাংলাদেশ ডেপুটি হাই-কমিশন পর্যন্ত প্রতিবাদ মিছিলের ডাক দিয়েছিল প্রদেশ কংগ্রেস। তবে বেকবাগান মোড়েই মিছিল আটকে দিয়েছে পুলিশ। শান্তির জন্য মোমবাতি হাতে মিছিলে ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার, প্রদেশ মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী সুব্রতা দত্ত, কৃষ্ণা দেবনাথ, আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়, প্রদীপ প্রসাদ, সুমন পাল, সুমন রায়চৌধুরী, ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভানেত্রী প্রিয়াঙ্কা চৌধুরী প্রমুখ। পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে এগোনো চেষ্টা করেননি কংগ্রেস কর্মী-সমর্থেরা। প্রদেশ সভাপতি শুভঙ্করের বক্তব্য, ‘‘বাংলাদেশে ঘটে চলা সংখ্যালঘুদের উপরে আক্রমণ নিয়ে বিজেপি এখানে বাগাড়ম্বর করছে কিন্তু এ দেশেও সমান ভাবে ঘৃণা ও বিদ্বেষের আবহে সংখ্যালঘুরা আতঙ্কিত ও আশঙ্কিত। উত্তরপ্রদেশ-সহ নানা রাজ্যের দিকে তাকালেই সেটা বোঝা যাবে। দেশের মাটি হোক বা বিদেশে, আমরা মনে করি সর্বত্র সংখ্যালঘুদের রক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রের এবং সেখানকার সংখ্যাগুরুদের। আমরা কংগ্রেসের তরফে সর্বদা মানবতার স্বার্থে পথে নেমেছি, আগামী দিনেও নামব।’’
এমতাবস্থায় নানা মহল থেকে প্রশ্ন উঠেছে, প্যালেস্টাইন নিয়ে যারা পথে নামে, সেই বামেরা বাংলাদেশ নিয়ে নীরব কেন? সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চত্রবর্তী অবশ্য এ দিন বলেছেন, ‘‘বাংলাদেশ প্রতিবেশী রাষ্ট্র হলেও যা চলছে, তা মেনে নেওয়া যায় না। তীব্র প্রতিবাদ করছি। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই হবে। সংখ্যাগুরুরা যখন মৌলবাদী শক্তিকে প্রশ্রয় দেয়, তার চেহারা ভয়ানক হয়। আমাদের দেশের ক্ষেত্রেও এটা সত্য। বাংলাদেশে কয়েক মাস ধরে যা চলছে, আমাদের দেশেরও সতর্ক হওয়ার সময় এসেছে।’’
শিক্ষা, সংস্কৃতি জগতের ব্যক্তিত্বদের একাংশও বিবৃতি দিয়ে বাংলাদেশে ‘সব ধরনের ধর্মীয় উগ্রতা, সাম্প্রদায়িক ও ফ্যাসিবাদী প্রচার এবং ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে বিবেকবান ও দায়িত্বশীল নাগরিকের ভূমিকা’ পালন করার ডাক দিয়েছেন। চট্টগ্রামের ঘটনার প্রেক্ষিতে বাসদ (মার্ক্সবার্দী) দলের বক্তব্য জানানো হয়েছে এসইউসি-র তরফে। সেখানে বাসদ সে দেশের সরকারের কাছে অবিলম্বে সব রাজনৈতিক দল এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, সংগঠনকে নিয়ে সম্মিলিত সভা আয়োজনের আহ্বান জানিয়েছে।