ওয়াকফ বোর্ডের বহু জমি বেদখল হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। সেই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী জানান, যা হওয়ার আগে হয়েছে। তাঁর কথায়, “১৯৩৪ সালে কে দখল করেছে বলতে পারব না।” তার পরেই বুলডোজ়ার নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক রায়ের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি জানান, জবরদখল সরাতে তাঁর প্রশাসন যেখানে সেখানে বুলডোজ়ার পাঠাবে না।
বৃহস্পতিবার বিধানসভায় মমতা বলেন, “কোনও ধর্মের ওপর অত্যাচার হলে মানব না। অন্য দেশে কোনও ধর্মের ওপর আক্রমণ হলেও মানি না।” ওয়াকফ বিল নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন বিজেপি বিধায়ক শিখা চট্টোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী জানান, জমি দখলের বিষয়টি ওয়াকফ বোর্ড ট্রাইব্যুনালকে জানিয়েছে। বেহাত হওয়া জমি উদ্ধারের জন্য নোটিস দেওয়া হয়েছে বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী।
তাঁর আমলে সংখ্যালঘুদের উন্নয়নে কী কী কাজ হয়েছে, তার খতিয়ান তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আগে সংখ্যালঘু খাতে বাজেট ছিল ৪৭২ কোটি টাকা। এখন সেটা ১০ গুণ বেড়েছে। ১৯টি জেলায় মাইনরিটি সেন্টার হয়েছে। মণ্ডল কমিশনের প্রস্তাব মেনে তফসিলি জাতি (এসসি) তফসিলি জনজাতি (এসটি) এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি (ওবিসি)-র সংরক্ষণ চালু হয়েছে।”
প্রসঙ্গত, কেন্দ্রের ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল ২০২৪ নিয়ে তৃণমূল স্পষ্ট বিরোধিতার অবস্থান নিয়েছে। তাদের মতে, ওই বিল সংবিধানের মৌলিক নীতির পরিপন্থী, গণতান্ত্রিক ও যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর বিরোধী। তৃণমূল সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, বিধানসভার চলতি অধিবেশনেই এই সংক্রান্ত একটি বিল পেশ এবং পাশ করাবে তাঁর সরকার। তবে সেটি বিল না কি প্রস্তাব আকারে আনা হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। নতুন ওয়াকফ বিলের বিরোধিতা করছে, এমন দলগুলির সঙ্গে তৃণমূল আলোচনা করেছে কি না, তা জানতে চান দলের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। জবাবে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এই প্রশ্নের জবাব এখানে দিতে পারি না।” তিনি এ-ও জানান যে, বিরোধিতার ক্ষেত্রে তৃণমূল নেতৃত্ব দিয়েছে। তার সঙ্গে অন্য দলগুলিও রয়েছে।
ওয়াকফ আইনে প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে সংসদের গত অধিবেশনের শেষ পর্বে সংশোধিত ওয়াকফ বিল এনেছিল মোদী সরকার। বিতর্কিত বিষয় হওয়ায় বিলটি তৎক্ষণাৎ যৌথ সংসদীয় কমিটি (জেপিসি)-তে পাঠিয়ে দেন স্পিকার ওম বিড়লা। কমিটির মেয়াদ ছিল তিন মাসের, যা আগামী ২৯ নভেম্বর শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সব পক্ষের বক্তব্য শোনা হয়নি, এই যুক্তিতে কমিটির মেয়াদ বাড়ানোর দাবিতে সরব ছিলেন বিরোধীরা। সম্প্রতি সেই মেয়াদ বৃদ্ধির দাবি মানার ইঙ্গিত দিয়েছে কেন্দ্র। বৃহস্পতিবার সংসদে এই মেয়াদবৃদ্ধির প্রস্তাব আনা হতে পারে। যৌথ সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এই ওয়াকফ বিল সংক্রান্ত আলোচনাতেই বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে তর্কাতর্কির পর ক্রুদ্ধ হয়ে কাচের বোতল ভেঙে ফেলেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। কাচের বোতল ভেঙে নিজের আঙুল নিজেই কেটে ফেলেছিলেন কল্যাণ।