বৃহস্পতিবার ছিল বিধানসভায় শীতকালীন অধিবেশনের চতুর্থ দিন। প্রথমার্ধ শুরু হয় প্রশ্নোত্তর এবং ‘কলিং অ্যাটেনশন’ পর্ব দিয়ে। পাথরপ্রতিমার বিধায়ক সমীর জানা প্রশ্ন করেন, ‘‘আমরা শুনেছি, আরজি কর-কাণ্ডের সময় অনেকে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের অপব্যবহার করেছেন। স্বাস্থ্যসাথী নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে। সে ব্যাপারে কি রাজ্য জানে?’’ এই ঘটনায় রাজ্য কী পদক্ষেপ করবে, তা-ও জানতে চান সমীর। জবাবে মমতা বলেন, ‘‘সহজসরল মনে বিশ্বাস করি, কিন্তু অন্তত এক শতাংশ মানুষ অপব্যবহার করেই! আরজি করের ঘটনার সময় অনেকেই স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের অপব্যবহার করেছেন। আমাদের কাছে প্রমাণও রয়েছে। স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের টাকা কিন্তু আমার-আপনার নয়। ওই টাকা জনগণের। জনগণের অর্থ যাঁরা নয়ছয় করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, ওই ঘটনায় প্রথম দফার তদন্ত হয়েছে। মিলেছে নানা সূত্র। আরও এক বার সবটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতির সময় স্বাস্থ্যসাথী খাতে সরকারের খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে বিভিন্ন মহল থেকে দাবি করা হয়। অভিযোগ ওঠে, সরকারি হাসপাতালে কর্মবিরতিতে থাকা চিকিৎসকেরা বেসরকারি হাসপাতালে চুটিয়ে প্র্যাকটিস করে গিয়েছেন। তার জেরেই স্বাস্থ্যসাথীতে খরচ বৃদ্ধি। মমতার বুধবারের মন্তব্য স্বাস্থ্যসাথীর ‘অপব্যবহার’-এর অভিযোগকে মান্যতা দিল বলে অনেকে মনে করছেন।
পাশাপাশি, ট্যাব-কাণ্ড নিয়েও মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘ট্যাব দিতে ১৬০০ কোটি টাকা দিয়েছিলাম। উত্তরপ্রদেশ, বিহার, রাজস্থানের ‘জামতাড়া গ্যাং’ সেই টাকা তছরুপ করেছে। আমরা ট্যাব-কাণ্ডে জড়িতদের কান ধরতে পেরেছি। খুব শীঘ্রই মাথাও ধরতে পারব। পুলিশকে ধন্যবাদ জানাই এত দ্রুততার সঙ্গে তদন্ত করার জন্য।’’ উল্লেখ্য, সরকারি স্কুলের একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের ট্যাব কেনার জন্য ‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পের অধীনে এককালীন ১০ হাজার টাকা করে দেয় সরকার। কিন্তু অভিযোগ, এ বছর রাজ্যের অনেক পড়ুয়ার অ্যাকাউন্টে ট্যাবের টাকা ঢোকেনি। বরং তা চলে গিয়েছে অন্য কারও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। টাকা ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে সেই টাকা তুলেও নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েক জনকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ।
সোমবার রাজ্য বিধানসভায় শীতকালীন অধিবেশন শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় গিয়ে প্রশ্নোত্তর পর্বে যোগ দেন। সেখান থেকে চলে যান দমদম বিমানবন্দরে। ঝাড়খণ্ডে সম্প্রতি বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় ফিরেছে হেমন্ত সোরেনের জেএমএম নেতৃত্বাধীন জোট সরকার। বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে হেমন্তের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান রয়েছে। সেখানেই যোগ দিতে যাবেন মমতা। রাতেই ফিরবেন কলকাতায়।