• দার্জিলিঙের ঐতিহ্য ট্রয় ট্রেন! হেরিটেজ শিরোপার ২৫ বছর পূর্তিতে নয়া চমক রেলের...
    ২৪ ঘন্টা | ২৮ নভেম্বর ২০২৪
  • নারায়ণ সিংহ রায়: দার্জিলিং ! এই নামটা মাথায় এলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে সবুজে ঘেরা শৈলরানি, বাতাসিয়া লুপ আর পাহাড়ের পাকদণ্ডি দিয়ে ধোঁয়া উড়িয়ে ছুটে চলা টয়ট্রেন । মনে পড়ে যায় সইফ আলি খান আর বিদ্যা বালন অভিনীত পরিণীতা ছবির সেই নেপালি গানের প্রিলিউড, 'কস্তো মাজা হ্যায় রেলাইমা, রেমাইলো উকালি উরালি'। দার্জিলিংয়ের টয়ট্রেন বিশ্বের পর্যটনের দরবারে এক বহুল প্রচলিত নাম । যার টানে বারে বারে দেশ বিদেশ থেকে পর্যটকরা ছুটে আসেন । আজও এটি পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ৷ দার্জিলিংয়ের টয়ট্রেন হেরিটেজ শিরোপা নিয়ে নিজের ইতিহাসকে গৌরবের সঙ্গে ধরে রেখেছে ।

    ঐতিহ্যবাহী টয়ট্রেন যেন শৈশবের দার্জিলিংয়ের স্মৃতির ছায়াসঙ্গী ৷ ব্রিটিশ আমলের এই গৌরবের ইতিহাস আজও সযত্নে লালিত৷ টয়ট্রেনের হেরিটেজ শিরোপার এবার ২৫ বছর পূর্তি ৷ তারই উদযাপনে একাধিক নয়া চমক নিয়ে হাজির দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে ৷ চাক্ষুস করা যাবে টয়ট্রেনের ১০০ বছরের পুরনো ইঞ্জিন ৷

    ১৮৭৮ সালে কলকাতার সঙ্গে প্রথম শিলিগুড়ি মিটার গেজ রেললাইনের মাধ্যমে যুক্ত হয় । কিন্তু সেই সময় শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং যাওয়ার জন্য ঘোড়ায় টানা টাঙা গাড়ি ছাড়া আর কোনও অবলম্বন ছিল না । সেইসময় ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে কোম্পানির এক এজেন্ট রেলপথে দার্জিলিংকে যুক্ত করার প্রস্তাব দেন । তৎকালীন গভর্নর অ্যাশলে ইডেন সেই প্রস্তাবে ছাড়পত্র দেন । কিন্তু মিটারগেজের ট্রেন ভারী হওয়ার কারণে ন্যারো গেজের ট্রেন চালানোর উদ্যোগ নেওয়া হয় । গভর্নরের সবুজ সংকেতের পর গিলেন্ডারস আরবাথনট অ্যান্ড কোম্পানি এই রেলপথ নির্মাণ করার কাজ শুরু করে ।

    ১৮৮০ সালের ২৩ অগস্ট শিলিগুড়ি-কার্শিয়াং অংশটি চালু হয় । তারপর দার্জিলিং পর্যন্ত লাইনের সম্প্রসারণ করে ১৮৮১ সালের ৪ জুলাই শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং লাইন চালু হয় । ৮৮ কিলোমিটার রেলপথ রয়েছে ওই ন্যারো গেজ রেললাইনে । প্রায় ৭২০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত ঘুম বিশ্বের সর্বোচ্চ রেলস্টেশন । স্বাধীনতার পর টয়ট্রেনকে ভারতীয় রেল উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলের অধীন দার্জিলিং হিমালয়ান রেলের আওতায় নিয়ে আসে । ১৯৩৪ সালে ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষতি হয় টয়ট্রেনের । কিন্তু তার পরেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সমস্ত ক্ষতি কাটিয়ে এই টয়ট্রেন সেনাবাহিনীকে খাবার ও সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । ১৯৯৯ সালের ৫ ডিসেম্বর ইউনেস্কো ডিএইচআরকে হেরিটেজ শিরোপা প্রদান করে ।

    টয়ট্রেনকে আরও বেশি প্রচারের আলোয় আনতে ২০২০ সাল থেকে ঘুম উৎসবের সূচনা করা হয়েছে । যেখানে দার্জিলিং হিমালয়ান রেল এবং টয়ট্রেনের ব্রিটিশ আমলের ইতিহাসকে পর্যটকদের সামনে তুলে ধরা হয় । চালানো হয় স্পেশাল জয়রাইড । সঙ্গে থাকে পাহাড়ের লোকসংস্কৃতির নাচ-গান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান । চলতি বছরেও একইভাবে ২৯ নভেম্বর থেকে ওই ফেস্টিভ্যালের সূচনা করা হবে । সেখানে ১০০ বছরেরও বেশি সময় পুরনো ব্রিটিশ আমলের তিনটি স্টিম ইঞ্জিনের ইতিহাসকে তুলে ধরা হবে ।

    দার্জিলিং হিমালয়ান রেলের ডিরেক্টর প্রিয়াংশু বলেন, "ডিএইচআর টয়ট্রেন আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও গর্বের জিনিস । আমরা সবসময় এই হেরিটেজ শিরোপাকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে থাকি । সেইসঙ্গে পর্যটকদের জন্য নানা নতুন পরিষেবা রাখা হয় । আগামীতেও এই পরিষেবা যাতে ভালোভাবে চলে সেদিকে সবসময় রেল কর্তৃপক্ষ তৎপর থাকে । আধিকারিক থেকে কর্মী মিলিয়ে ডিএইচআরের অধীন প্রায় পাঁচশোরও বেশি কর্মীর অবদান রয়েছে ।"

     

  • Link to this news (২৪ ঘন্টা)