• মাটির বদলে প্লাস্টিকের হাঁড়ি, স্বাদ ও গন্ধ হারিয়ে জাত খোয়াচ্ছে নলেন গুড়
    বর্তমান | ২৯ নভেম্বর ২০২৪
  • পিনাকী ধোলে, অযোধ্যা: আগের মতো প্রাণ ভরানো স্বাদ নেই। উধাও হয়ে গিয়েছে মন মাতানো গন্ধও। তবুও শীতে নলেন গুড়ের চাহিদা কমেনি এতটুকুও। স্বাদ গন্ধ হারিয়ে জাত খোয়ালেও ২০০ টাকা কেজি দরেই বিক্রি হচ্ছে নলেন গুড়। পুরুলিয়ায় বেড়াতে এসে চড়া দামেই গুড় কিনে নিয়ে যাচ্ছেন পর্যটকরা।


    জাঁকিয়ে শীত না পড়লেও শীতের আমেজে ইতিমধ্যেই গা সেঁকতে শুরু করে দিয়েছে আপামর বাঙালি। সেই সঙ্গে বাঙালির খাদ্য তালিকায় ঢুকে গিয়েছে নলেন গুড়ের তৈরি রসগোল্লা, সন্দেশ, পায়েস। নলেন গুড় ছাড়া শীতকাল যেন কল্পনাও করতে পারেন না ভোজন রসিক বাঙালি। পুরুলিয়ার বেশ কিছু প্রখ্যাত মিষ্টির দোকানে ইতিমধ্যেই বিক্রি শুরু হয়েছে নলেন গুড়ের মিষ্টি। কিন্তু, গত কয়েক বছর ধরেই কমতে কমতে গুড়ের স্বাদ গন্ধটাই এখন যেন মিলিয়ে গিয়েছে বলে দাবি খাদ্য রসিকদের।


    পুরুলিয়ার পাড়া, সাঁতুড়ি, কাশীপুর, রঘুনাথপুর, হুড়া থেকে শুরু করে অযোধ্যা পাহাড়তলির বাঘমুণ্ডি এলাকায় অসংখ্য খেজুর গাছ রয়েছে। ফি বছর পুজোর পর থেকেই শিউলিদের তাঁবু পড়ে যায় জেলার নানা প্রান্তে। তখন থেকেই খেজুর গাছের ছাল কাটা শুরু হয়। তারপরে তাতে ‘নলি’ লাগিয়ে নীচে রসের জন্য হাঁড়ি ঝোলানো হয়। ভোররাতে রসবোঝাই হাঁড়ি নামিয়ে তৈরি হয় সুগন্ধি গুড়। পুরুলিয়ার অযোধ্যার বামনি ফলস যাওয়ার মোড়েই তাঁবু ফেলেছেন বাঁকুড়ার ইন্দপুরের গুড় ব্যবসায়ী সাদ্দাম মণ্ডল। তিনি বলছিলেন, এবছর পর্যটকদের জন্য গুড়ের দাম ২০০টাকা প্রতি কেজি রেখেছি। তবে স্থানীয় লোক হলে ১৫০টাকা কেজি নিচ্ছি।


    গুড়ের স্বাদ কেমন? জিজ্ঞাসা করতেই ছোট চায়ের কাপে কিছুটা গুড় ঢেলে দিলেন সাদ্দাম। নলেন গুড়ের সেই অতুলনীয় স্বাদ উধাওয়ের আক্ষেপ করতেই সাদ্দাম বললেন, ‘জাঁকিয়ে শীত না পড়লে গুড়ের স্বাদও জমে না।’ শুধুই কী শীত? সাদ্দামের জবাব, না, আরও একটি কারণ আছে। তা হল হাঁড়ি বদল। বর্তমানে মাটির হাঁড়ির বদলে খেজুর গাছের রস সংগ্রহে দেদার ব্যবহার করা হচ্ছে প্লাস্টিকের হাঁড়ি। মাটির হাঁড়িতে রস সংগ্রহ করলে সেই রসের স্বাদ ও গন্ধ অটুট থাকে। কিন্তু, প্লাস্টিকের হাঁড়িতে তা হয় না। তাছাড়া, হাঁড়ি যাতে গন্ধ না হয়, প্রতি তিনদিন অন্তর মাটির হাঁড়ি পোড়ানো হয়। ফলে গন্ধে কোনও প্রভাব পড়ত না। কিন্তু, প্লাস্টিক হাঁড়ির ক্ষেত্রে তা করা যায় না। কেন মাটির হাঁড়ির আর লাগানো হয় না? আর এক গুড় ব্যবসায়ী সইদুল খান বলেন, ‘মাটির হাঁড়ি টাঙালে প্রায়শই তা ভেঙে দেয় স্থানীয়রা। ফলে লোকসান হয়।’


    বর্তমানে, মিষ্টির দোকানে যে সব গুড় ব্যবহৃত হচ্ছে কিংবা মুদির দোকানে যে গুড় বিক্রি হচ্ছে সেই গুড়ে আবার ভেজাল মেশানো হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের দাবি, ভালো গুড়ের দাম ১৫০ থেকে ২০০ টাকা প্রতি কেজি। কিন্তু, ক্রেতা থেকে আড়তদাররা সেই দাম দিতে নারাজ। তাই ভেজাল মেশানো হচ্ছে। খেজুর রসের সঙ্গে মিশছে চিনির শিরা। তাতে গুড়ে না থাকছে স্বাদ, না থাকছে মন মাতানো গন্ধ। এই দিয়েই রসনাতৃপ্ত হচ্ছে বাঙালির।  নিজস্ব চিত্র


     
  • Link to this news (বর্তমান)