• শিল্পাঞ্চলে দূষণ রোধে সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক ডাকলেন জেলাশাসক
    বর্তমান | ২৯ নভেম্বর ২০২৪
  • সুমন তেওয়ারি, আসানসোল: স্রেফ নজরদারির অভাবেই কী দূষণের গ্রাসে শিল্পাঞ্চল? এই প্রশ্নকে ঘিরে এখন জোর চর্চা আসানসোল-দুর্গাপুরে। সূচক বলছে, দিল্লির দূষণকেও পিছনে ফেলে দিয়েছে শিল্পাঞ্চল। তাতেই ঘুম ছুটেছে সব মহলের। ফলে আর দেরি না করেই পরিস্থিতি মোকাবিলায় নামল জেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবারই দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন জেলাশাসক পোন্নমবলম এস। সামনের সপ্তাহে পুরসভা থেকে শুরু  করে কারখানা কর্তৃপক্ষ, পুলিস থেকে ব্লক প্রতিনিধিদের নিয়ে ফের আরও একটি বৈঠক করবেন তিনি। তার আগে আজ, শুক্রবার একাধিক কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের আধিকারিকদের। 


    কেন্দ্রীয় সরকারের পোর্টালে বুধবার প্রকাশিত হয় দূষণ সংক্রান্ত একটি বুলেটিন। তাতে দেখা যায়, আসানসোলের একিউআই বা বাতাসের মান যাচাইয়ের সূচক ৩৪৪, দুর্গাপুর ৩৩৭। সেক্ষেত্রে দিল্লির একিউআই ৩০৩। অর্থাৎ, পশ্চিম বর্ধমানের দুই শহরই দিল্লির থেকেও দুষিত। তার প্রমাণও মিলছে হাতেনাতে। কয়েকদিনে ধরেই শিল্পাঞ্চলের দূষণের মাত্রা মাথা ধরিয়ে দিয়েছে পরিবেশ প্রেমীদের। পোর্টালে ২৫৪টি শহরের একিউআই প্রকাশ করা হয়। সেখানে দেখা যাচ্ছে, একেবারে প্রথম সারিতে রয়েছে আসানসোল, দুর্গাপুর। যাঁদের বাতাসের গুণমান ‘অতি খারাপ’। 


    কেন এমন দশা? এলাকাবাসীর দাবি, দূষণ নিয়ে নজরদারির অভাবই এই পরিস্থিতি। আসানসোলে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সামনেই কল্যানপুর স্ট্যাটেলাইট টাউনশিপ যাওয়ার রাস্তা দিনের পর দিন আগুন ধরিয়ে পোড়ানো হচ্ছে জঞ্জাল। ঘন ধোঁয়ায় ঢেকে যাচ্ছে এলাকা। নাজেহাল দশা হচ্ছে শহরবাসীর। পর্ষদের নাকের ডগায় এই ঘটনা ঘটলেও তা বন্ধ করতে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ।। রানিগঞ্জের পরিস্থিতিও অত্যন্ত খারাপ। ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কে গেলেই তা মালুম হয়। মঙ্গলপুর শিল্পতালুক ঢেকে থাকে দূষণের চাদরে। জাতীয় সড়কের উপর যানবাহন চালানোও বিপজ্জনক হয়ে উঠছে।  বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় চিঠিও লেখেন জেলাশাসককে। দূষণ বিধি না মেনে একাধিক কারখানা চলছে বলেই এই দশা। বিধায়কের চিঠির পরও অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয়নি। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি দুর্গাপুরে। অথচ, সেখানেও রয়েছে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের একটি রিজিওন্যাল অফিস। একাধিক জায়গায় দূষণ পরিমাপ করার জন্য মেশিন বসানো হয়েছে। কারখানাগুলি কতটা বায়ূদূষণ করছে, তা নজরদারি করার জন্য চারটি অত্যাধুনিক ড্রোনও কেনা হয়। সেগুলি দূষণ পরিমাপ করতে পারবে। অভিযোগ, ইনস্ট্রুমেন্ট থাকলেও নজরদারির মানসিকতা না থাকার কারণে দূষণের বাড়বাড়ন্ত নিয়ন্ত্রণে আসেনি। নজরদারির অভাবকে কাজে লাগিয়ে বহু কারখানা কর্তৃপক্ষ দূষণ প্রতিরোধী মেশিনগুলিকে চালু রাখছে না। কারখানার চিমনি থেকে অনর্গল নির্গত হচ্ছে দূষিত বায়ু। পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় রাস্তায় ধুলিকনা উড়েও মাত্রাতিরিক্ত দূষণ হচ্ছে।  


    জেলাশাসক পোন্নমবলম এস বলেন, ‘যেভাবেই হোক আমাদের দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতেই হবে। আমরা আগামী সপ্তাহে সব পক্ষকে নিয়ে বড় বৈঠক করব। সেখানে প্রয়োজনে কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ 
  • Link to this news (বর্তমান)