নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: শহরে জাঁকিয়ে ঠাণ্ডা পড়ার আগেই গভীর ‘শীতঘুম’-এ চলে গিয়েছে কলকাতা মেট্রোর চীনের ডালিয়ান শহরে তৈরি রেকগুলি। কর্মী সংকট, পরিচালনগত ত্রুটি সহ হাজারো পরিকাঠামো গত সমস্যার ভুগছে কবি সুভাষ থেকে দক্ষিণেশ্বর মেট্রো করিডর। ফলস্বরূপ নিত্যদিন যাত্রী পরিষেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ‘মেধা’ ও ‘ভেল’ জোড়া রেকগুলির কর্মক্ষমতা কমতে শুরু করেছে। সেই সূত্রেই দেশের প্রথম মেট্রো রুটে ‘নতুন রক্ত’ আমদানি করতে পাঁচ বছর আগে সুদূর চায়না থেকে এসেছিল ‘ডালিয়ান রেক’। কিন্তু প্রথম থেকেই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছিল এই ‘চায়না প্রোডাক্ট’। যার একটি রেকে (নম্বর ৫১৪) ধরা পড়েছে বড়সড় ত্রুটি। তার জেরে গত তিনমাস ধরে বাস্তবিকই নোয়াপাড়া কার শেডে বসে রয়েছে নর্থ-সাউথ করিডরের সাম্প্রতিকতম এই মেট্রো রেকটি। সূত্রের দাবি, সংশ্লিষ্ট রেকের মোটরে ধরা পড়েছে একাধিক অসঙ্গতি। ফলে যাত্রী পরিষেবায় নামানো যাচ্ছে না সেটিকে। চীন থেকে কবে মেট্রোর পার্টস আসবে, তীর্থের কাকের মতো সেই দিকে তাকিয়ে রেল কর্তারা।
এ প্রসঙ্গে মেট্রো ভবনের এক শীর্ষ আধিকারিক বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অন্যতম মূল স্লোগান ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’। কিন্তু তার উল্টোপথে হেঁটে ভারতীয় প্রযুক্তির অবমাননা করে কয়েক হাজার কোটি টাকা মেট্রোর বরাত দেওয়া হয়েছিল চীনে। সবমিলিয়ে ১৪টি চীনা রেক আসবে কলকাতা মেট্রোতে। ২০১৯ সালের জুলাইতে যার মধ্যে প্রথম রেকটি এসেছিল। চায়নার রেক আসার পর থেকেই গুচ্ছ গুচ্ছ ত্রুটি-বিচ্যুতি ধরা পড়তে শুরু করে। নর্থ-সাউথ রুটে যাত্রী নিয়ে ছোটার মতো ‘ফিট’ হতে পারছিল না চীনা রেকটি। চার বছরের দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর ১৭ মার্চ ২০২৩ প্রথমবারের জন্য ডালিয়ান রেকটি যাত্রী বোঝাই করে ছোটাছুটি শুরু করেছিল। যদিও নিয়মিতভাবে তা চলতে আরও কয়েকমাস লেগে গিয়েছে। অন্যদিকে, এ বছর ২৫ মে আরও দু’টি চীনা রেক (নম্বর ৫১৩, ৫১৪) মহানগরীতে এসে পৌঁছয়। যার মধ্যে ৫১৪ নম্বর রেকটি ৩১ আগস্ট প্রথম যাত্রা শুরু করেছিল। কিন্তু মাত্র দিন দুয়েক চলার পরই সংশ্লিষ্ট সেই রেকের চাকা কার্যত বসে গিয়েছে। মোটরে যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য ট্র্যাকে নামতেই পারছে না ‘অসুস্থ’ এই রেকটি।
ওই মেট্রো কর্তা আরও বলেন, সম্প্রতি রেল বোর্ডের তরফে বাকি ১১টি রেক পাঠিয়ে দেওয়ার সবুজ সঙ্কেত দেওয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত আসা তিনটি রেক নিয়ে চরম জটিলতা চলছে। প্রযুক্তিগত ও কারিগরি ক্ষেত্রে এই রেকগুলি গুণগতমান নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তাহলে কেন তড়িঘড়ি সেই সমস্যার স্থায়ী সমাধান না করে বাকি ‘আনফিট’ রেকগুলি নিয়ে আসার সক্রিয়তা শুরু হয়েছে? তবে কী ভিন্ন কোনও রহস্য রয়েছে এই বরাত দেওয়া নিয়ে, মারাত্মক প্রশ্ন তুলেছেন ওই কর্তা। সূত্রের দাবি, এখনও সঠিকভাবে জানা যায়নি চীন থেকে কবে প্রয়োজনীয় পার্টস আসবে। যার জেরে যাত্রী নিয়ে ফের চীনা রেক নম্বর ৫১৪ মেট্রো যাত্রা শুরু করতে পারবে, তা আক্ষরিক অর্থেই অনিশ্চিত।