সংবাদদাতা, করিমপুর: সর্ষে ও ডালের বদলে এবার রসুন চাষে ঝুঁকেছেন চাষিরা। এবছর রসুনের ভালো দাম পাওয়াই এর পিছনে অন্যতম কারণ। তাঁরা জানান, বেশিরভাগ চাষি পেঁয়াজ বিক্রি করে লাভের মুখ দেখতে পাননি। তবে রসুনের বাজারদর প্রথম থেকেই ভালো থাকায় লাভবান হয়েছেন চাষিরা। তাই এবছর সকলেই বেশি জমিতে রসুন চাষ করছেন। করিমপুরের নন্দনপুর, কাঠালিয়া ও গোয়াস এলাকায় প্রতিবছর সর্ষে এবং মুসুর, মটর ছোলার মতো বিভিন্ন ডাল ও প্রচুর পরিমাণ পেঁয়াজ ও রসুনের চাষ হয়।
এবছরে রসুনের দাম বেশি হওয়ায় খুশি চাষিরা। কাঠালিয়ার এক রসুন চাষি সুদর্শন বিশ্বাস বলেন, ফাল্গুন-চৈত্র মাসে জমি থেকে পেঁয়াজ ওঠার সময় পাঁচ-সাত হাজার টাকা কুইন্টাল দরে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। তবে হাতে গোনা কিছু চাষি যাঁরা পেঁয়াজ মজুত করে রাখতে পেরেছেন তাঁরা শেষ পর্যন্ত পনেরো হাজার দরে বিক্রি করেছেন। কিন্তু রসুনের দাম এবার প্রথম থেকেই বেশি ছিল। মাস দুয়েক আগেও এক কুইন্টাল রসুন চল্লিশ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে।
ফলে দাম ভালো পাওয়ার আশায় এই মরশুমে চাষিরা বেশি করে রসুন চাষ করছেন। গত বছর আমি দেড় বিঘা জমিতে রসুন চাষ করেছিলাম, এবার করেছি আড়াই বিঘা জমিতে। মলিন সরকার বলেন, কার্তিক মাসের মাঝামাঝি সময়ে রসুনের বীজ জমিতে রোপণ করা হয় এবং ফসল ওঠে ফাল্গুন-চৈত্র মাসে। এক বিঘা রসুন চাষ করতে আশি থেকে নব্বই কিলো বীজ দরকার হয়। রোপণের পর থেকে সার, সেচ ও শ্রমিকের খরচ করে বাড়িতে এনে প্যাকেটজাত করা পর্যন্ত বিঘা প্রতি জমিতে প্রায় ত্রিশ-পয়ত্রিশ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রায় পাঁচ মাসের এই ফসলের এবারে যা দাম পেয়েছেন তাতে চাষিরা ভালো লাভ করেছেন এবং এবছর সকলে বেশি বেশি করে রসুন চাষ করছেন। নির্মল সিকদার জানান, ভালো ফলন হলে এক বিঘা জমিতে প্রায় ষোলো থেকে কুড়ি কুইন্টাল কাঁচা রসুন উৎপাদন হতে পারে। সেগুলো রোদে ভালো করে শুকোতে হয় এবং সেই রসুনের ওজন কমে বারো থেকে পনেরো কুইন্টালে দাঁড়ায়।
এবারে শুকনো ভালো রসুনের দাম প্রথম দিকে দশ-বারো হাজার হলেও শেষে প্রায় চল্লিশ হাজার প্রতি কুইন্টাল দাম পাওয়া গিয়েছে। গত বছর চার বিঘা রসুনের জায়গায় এবছর ছয় বিঘা জমিতে রসুন চাষ করছি। রসুনের এত দাম এর আগে কখনও হয়নি। এমনিতে পেঁয়াজ কিংবা রসুন চাষে খরচের টাকা তুলতে চাষিদের কালঘাম ছুটে যায়। এবার এলাকার সকলেই বেশি জমিতে রসুন লাগাচ্ছেন যাতে অন্য চাষের ক্ষতিতে কিছুটা প্রলেপ দিতে পারেন।