গত কয়েক দিন ধরে বাংলাদেশে নতুন করে অশান্তি মাথাচাড়া দেওয়ায় মার্কুইস স্ট্রিট, সদর স্ট্রিট কার্যত খাঁ খাঁ করছে। মার্কুইস স্ট্রিটে জামাকাপড়ের দোকান থেকে শুরু করে হোটেল, রেস্তরাঁ— সবই প্রায় ফাঁকা। একটি হোটেলের এক কর্মী মুনমুন মিত্র বললেন, ‘‘এই হোটেলের বেশির ভাগ ঘরই এখন ফাঁকা। শুনছি, যাঁরা চিকিৎসা করাতে আসছেন, শুধু তাঁরাই নাকি ভিসা পাচ্ছেন।’’ ওই এলাকায় কাশ্মীরি শাল ও জামাকাপড়ের দোকান তারিফ আহমেদের। তারিফ বলেন, ‘‘নভেম্বর, ডিসেম্বর পর্যটকদের আসার মরসুম। অথচ, এখন খদ্দের নেই একেবারেই। তাই তিন জন কর্মচারীকে ছুটি দিয়ে দিয়েছি। গত কয়েক দিনের গোলমালে সব শুনশান।’’ ‘মার্কুইস স্ট্রিট-সদর স্ট্রিট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি মনোতোষ সাহা বললেন, ‘‘বাংলাদেশের অশান্ত পরিস্থিতির কারণে ব্যবসায় মন্দা চলছে ঠিকই, তবে আমাদের কাছে নিজের দেশের নিরাপত্তা সবার আগে। আমরা চাই, যত দ্রুত সম্ভব ওই দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক। বাংলাদেশের কারণে এ দেশের পরিস্থিতি যেন বিষিয়ে না যায়। মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে যেন সংশয় তৈরি না হয়।’’
চট্টগ্রামে ফিরবেন সেখানকার বাসিন্দা বরুণ দাস। বললেন, ‘‘চট্টগ্রামের বাড়িতে বার বার ফোন করে খবর নিচ্ছি। খবর পেলাম, আমাদের ওখানে পরিস্থিতি এখন শান্ত। তবে, মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তো আছেই। নিরীহদের গ্রেফতার করা হচ্ছে বলে শুনছি। আমার দুই ছেলে। ওরা আপাতত ঠিক আছে।’’ মার্কুইস স্ট্রিটে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের নাগরিক জন সৈকত বিশ্বাস বললেন, ‘‘যত তাড়াতাড়ি স্থায়ী সরকার আসবে, তত তাড়াতাড়ি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। আমরা স্থায়ী সরকার চাইছি।’’
বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসা করাতে এসে মুকুন্দপুর এলাকার হোটেল বা অতিথিশালায় ঘর ভাড়া নিয়ে থাকেন অনেকেই। ওই চত্বরের সোনালি পার্ক এলাকার একটি হোটেলের এক আধিকারিক ভবসিন্ধু ব্যাপারী বললেন, ‘‘নতুন করে খুব কম রোগীই আসছেন। এখন ঘর বেশির ভাগই ফাঁকা। এখন বিয়ের মরসুম। বিয়েবাড়ির অতিথিরা কিছু ঘর ভাড়া নেওয়ায় ব্যবসা কোনও মতে চলছে।’’
বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসা করাতে এসে হোটেল বা অতিথিশালায় যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যে এক জন মঞ্জু সরকার। তাঁর কথায়, ‘‘আমার বাড়ি রাজশাহীতে। স্বামীর সঙ্গে এসেছি। আমাদের মেয়ে, নাতি, নাতনি, জামাই— সকলেই ও দেশে রয়েছে। ওরা কেমন আছে, প্রতিদিন খবর নিচ্ছি। আতঙ্কে তো আছেই। ভিসার যা কড়াকড়ি শুনছি, ফের ডাক্তার দেখাতে এ দেশে আসতে পারব তো?’’ মঞ্জুর পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা আর এক মধ্যবয়সি ব্যক্তি বললেন, ‘‘আমি সরকারি চাকরি করি। নাম, ঠিকানা কিছু বলতে পারব না। শুধু এটুকু বলতে পারি, পরিস্থিতির কথা যা শুনছেন, বাস্তবে তার থেকেও খারাপ। কবে যে স্বাভাবিক হবে, জানি না।’’