সোশ্যাল মিডিয়ায় ৩০ হাজারে আগ্নেয়াস্ত্র! আপলোড হচ্ছে রিল, যোগ মিলছে বিহার-ঝাড়খণ্ডের
বর্তমান | ০১ ডিসেম্বর ২০২৪
স্বার্ণিক দাস, কলকাতা: খাবার থেকে প্রসাধন, জামাকাপড় থেকে পছন্দের বই—এখন সবই মেলে বাড়িতে বসে। আজকের জেন-জি প্রজন্ম অনলাইন কেনাকাটায় যথেষ্ট স্বচ্ছন্দও বটে। কিন্তু অনলাইনে আগ্নেয়াস্ত্রের কারবার! তাও যে সম্ভব, সম্প্রতি জানতে পেরে রীতিমতো তাজ্জব দুঁদে পুলিসকর্তারাও। এক্ষেত্রে ক্রেতাদের জন্য ‘সুবিধা’ অবশ্য আরও বেশি। আগ্নেয়াস্ত্র চালিয়ে তার ভিডিও তুলে সেটির কার্যকারিতার প্রমাণ দেওয়া হচ্ছে বিজ্ঞাপন হিসেবে। অস্ত্রের ক্ষমতা যাচাই করেই তা কেনার সুযোগ পাচ্ছে অবৈধ কারবারিরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া ভিডিওগুলিতে দেখা যাচ্ছে, পিস্তলের ম্যাগাজিনে কার্তুজ লোড করা হচ্ছে প্রথমে। সেই লোডেড ম্যাগাজিন ভরা হচ্ছে সেমি অটোমেটিক ৭ কিংবা ৯ এমএম পিস্তলে। তারপর বালির উপর ফায়ার। দামও জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে ওই ভিডিওতেই। সেমি অটোমেটিক ৭ এমএম পিস্তলের দাম ৩০ হাজার টাকা, দেশি ওয়ান শটারের দাম কিছুটা কম, ১২ হাজার টাকার আশপাশে। গোলাগুলি, কার্তুজের দাম আলাদা।
অস্ত্র পাচার সংক্রান্ত একটি মামলার তদন্তে নেমে এই চাঞ্চল্যকর বিষয়টি জানতে পারে লালবাজার। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, আগে গোপন চরের মাধ্যমে অস্ত্র লেনদেন চলত। ‘মিডলম্যান’ ক্রেতাকে আগ্নেয়াস্ত্রের ছবি দেখাত। তা দেখে পছন্দ হলে তবেই শুরু হতো বরাত দেওয়ার প্রক্রিয়া। পরবর্তীকালে ফোনে যোগাযোগ করে আগ্নেয়াস্ত্রের কারবার চলেছে। এসব ক্ষেত্রে ক্রেতা ও বিক্রেতার ফোন নম্বরই পুলিসের তদন্তে প্রধান ক্লু হয়ে উঠত। সেই সূত্র ধরে এগলে সহজে পাকড়াও করা যেত বেআইনি অস্ত্র ব্যবসায়ী ও প্রস্তুতকারককে। এবার জানা গেল, আগের সব কৌশল অতীত! অস্ত্র কারবারের নয়া ‘অস্ত্র’ হয়ে উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়া।
লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, পুলিসের নজর এড়াতেই এই কৌশলের আমদানি। ইনস্টাগ্রাম ‘রিল’-এ ৭ এমএম, ৯ এমএম, গ্লক পিস্তল, ওয়ান শটারের ভিডিও আপলোড করা হচ্ছে। সেই ভিডিও থেকে মূল অ্যাকাউন্টে ঢুকে অস্ত্র কারবারিরা যোগাযোগ করছে প্রস্তুতকারকদের সঙ্গে। এই সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুলি ‘ট্র্যাক’ করারও উপায় নেই। কারণ, সবটাই চলছে ভুয়ো আইপি অ্যাড্রেস ব্যবহার করে, যার লোকেশন খুঁজে পাওয়া দুঁদে গোয়েন্দাদের পক্ষেও প্রায় দুষ্কর।
কলকাতা পুলিসের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের এক বিশেষ সূত্র জানিয়েছে, পাকিস্তান, আফগানিস্তানে এভাবে সোশ্যাল মিডিয়াতে ভিডিও প্রচার করে অস্ত্রের কারবার চলে। কিন্তু ভারতে এই কৌশল নতুন। বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র কারবারিদের অন্যতম ঘাঁটি বিহার ও ঝাড়খণ্ড। সেখানকার কোনও প্রত্যন্ত গ্রামে ভিডিওগুলি ধারণ করা হচ্ছে বলে প্রাথমিক অনুমান পুলিসের। যদিও অস্ত্র কারবারিদের পক্ষে ভুয়ো আইপি অ্যাড্রেস ব্যবহার করে সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাকাউন্ট খোলা সম্ভব নয়। সাইবার অপরাধীরা এই কাজে দক্ষ। সেই সূত্রেই তদন্তকারীদের অনুমান, অস্ত্র কারবারিদের নেটওয়ার্কের সঙ্গে সাইবার অপরাধীদের কোনও যোগসূত্র রয়েছে। যৌথভাবে চলছে এই র্যাকেট। উল্লেখ্য, গত ২৩ নভেম্বর রাতে শিয়ালদহের বৈঠকখানা বাজার থেকে মহম্মদ ইসরাইল খান নামে এক কুখ্যাত অস্ত্র কারবারিকে গ্রেপ্তার করে এসটিএফ। তার সঙ্গে এই ‘ভার্চুয়াল’ অস্ত্র ব্যবসায়ীদের যোগ থাকতে পারে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।