১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের ‘বিজয় দিবস’ উদ্যাপনে সাধারণত সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের একটি প্রতিনিধিদল ঢাকায় পাড়ি দেয়। একই সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দলও আসে ফোর্ট উইলিয়ামে। বাংলাদেশের ‘ভারত বন্ধু’ এবং ভারতের ‘বাংলাদেশ বন্ধু’ বিশিষ্টজনেদের উপস্থিতিতে নানা অনুষ্ঠানের রীতি রয়েছে। ৫৩ বছর আগের ১৬ ডিসেম্বর কলকাতা থেকেই মুক্তিবাহিনীর শীর্ষ আধিকারিকেরা তাঁদের থিয়েটার রোডের ঘাঁটি থেকে বিমানবন্দরে পৌঁছে ইস্টার্ন কমান্ডের সর্বাধিনায়ক, জেনারেল অরোরার সঙ্গে হেলিকপ্টারে ঢাকা উড়ে গিয়েছিলেন। তার পরে অরোরার সামনেই কাগজে সই করে পাক বাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল এ কে নিয়াজ়ি আত্মসমর্পণ করেন। স্বাধীনতা লাভ করে বাংলাদেশ।
ভারত, বাংলাদেশ— দু’দেশের ইতিহাসের সেই অধ্যায়টি নিয়েই এ বছর ঢাকার কূটনৈতিক মহল মারফত খানিক ধোঁয়াশার ইঙ্গিত মিলছে। বিজয় দিবসের দোরগোড়াতেও যৌথ উদ্যাপন ঘিরে অনিশ্চয়তা জারি রয়েছে। তবে ঢাকার সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যাচ্ছে, ইস্টার্ন কমান্ডের তরফে বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট আন্তরিক আহ্বান উঠে আসে। মুক্তিযোদ্ধারা কেউ কেউ গত বছর আগরার তাজমহল নিয়ে কৌতূহল প্রকাশ করেছিলেন। শোনা যাচ্ছে, এ বার সেনাকর্তারা তাঁদের তাজমহল দর্শনের আয়োজনেও উৎসাহী ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দু’দেশের পারস্পরিক সফরই বাস্তবায়িত হওয়ার সম্ভাবনা কম। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে এই পরিকল্পনা নিয়ে এখনই কেউ কিছু বলতে নারাজ। আর কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনের তরফেও মুখে কুলুপ। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের বিদেশ দফতরের ডিজি (দক্ষিণ এশিয়া) ইসরাত জহানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও সাড়া মেলেনি। তবে সূত্র মারফত যা জানা গিয়েছে, কলকাতার বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনে পতাকা তুলে দিনটি হয়তো নিচু তারে উদ্যাপন করা হবে।
গত অগস্টে বাংলাদেশের গণ-অভ্যুত্থান শেষে শেখ হাসিনার হাত থেকে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরেই মুক্তিযুদ্ধের নানা অনুষঙ্গ ঢাকায় জনতার হাতে ধ্বংস হয়। একাত্তরের ঐতিহ্য রক্ষার পক্ষে-বিপক্ষে বাংলাদেশে বিভাজনও সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকার প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধারাও অনেকে সংশয়ে, শেষ পর্যন্ত বিজয় দিবসের উদ্যাপনে ঢাকা কত দূর শামিল হবে। তাঁদের মধ্যে এক জন বলেন, “১৪ ডিসেম্বর শহিদ বুদ্ধিজীবী হত্যা দিবস এবং ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস, এই দু’টি দিন ঢাকায় কী ভাবে পালিত হয়, তার উপরে আগামীর অনেক কিছু জড়িয়ে। কলকাতার অনুষ্ঠানে এ বার কী হয়, সেটার জন্যও আমরা অপেক্ষা করছি।” ইস্টার্ন কমান্ড তথা ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছেও ১৬ ডিসেম্বর গর্বের দিন। দিনটি এ বার কী ভাবে পালন করা হবে, তা ৬ ডিসেম্বরের পরে বোঝা যাবে বলে জানা গিয়েছে।
বইমেলায় বাংলাদেশের এ বার না-থাকারই সম্ভাবনা। ক’দিন বাদে শুরু হতে চলা ৩০তম কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশের কোনও ছবি নেই। সেই সঙ্গে বিজয় দিবসের যৌথ উদ্যাপন না-ঘটলে দু’দেশের সাংস্কৃতিক যোগসূত্র আলগা হওয়ার আশঙ্কা থাকছে।