সংবাদদাতা, বোলপুর: পৌষমেলা আয়োজনে প্রশাসনের তরফে বিশ্বভারতীকে সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস দিল নবান্ন। শনিবার সন্ধ্যায় শান্তিনিকেতনে যান জেলাশাসক বিধান রায়। সেখানে বোলপুরের মহকুমা শাসক সহ জেলাশাসক বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন। গত বছরের মত এবারও মেলা ও উৎসব আয়োজনে সব রকম সহযোগিতা করা হবে বলে উপাচার্যকে আশ্বাস দিয়েছেন জেলাশাসক। এমনটাই বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে। প্রশাসনের এই আশ্বাস পেয়ে পুরোদমে প্রস্তুতি শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয়। অনলাইন মাধ্যমে স্টল বন্টনের কথা কর্তৃপক্ষ আগেই জানিয়েছে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই বুকিং শুরু হবে বলে জানিয়েছে বিশ্বভারতী কর্মী পরিষদ।
২০১৯ সালের পর গতবছর পূর্বপল্লির মাঠে ফেরে ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলা। বিশ্বভারতী মাঠ দেওয়ায় বাকি পরিকাঠামো ও প্রশাসনিক সহযোগিতা দিয়ে বীরভূম জেলা প্রশাসন সফলভাবে পৌষমেলা আয়োজন করেছিল। এবছর, নিজেদের উদ্যোগে পৌষমেলা আয়োজন করার কথা জানায় বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। তবে, প্রশাসনিক সহযোগিতার জন্য জেলা ও রাজ্য প্রশাসনকে আবেদন করে কর্তৃপক্ষ। সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জেলা প্রশাসনের গত ২৫ নভেম্বর শান্তিনিকেতনের সেন্ট্রাল লাইব্রেরিতে বৈঠক হয়। উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা সহ প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিরা। প্রশাসনের ইতিবাচক সাড়া পেয়ে মেলার প্রস্তুতি শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়। এরপর শনিবার সন্ধ্যায় শান্তিনিকেতনের রবীন্দ্র ভবনে বিশ্বভারতীর সঙ্গে বৈঠক করেন জেলাশাসক বিধান রায়। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে পৌষমেলা ঐতিহ্য ধরে রাখতে বিশ্বভারতীর পাশাপাশি রাজ্য সরকারও সমানভাবে তৎপর। সব বিষয়গুলিতে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে নজর রাখছে নবান্ন। উপাচার্য ছাড়াও ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য আধিকারিকরা।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গিয়েছে, মেলার বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা—গতবারে জেলা প্রশাসনের একক উদ্যোগে মেলা সফল হয়েছিল। এবার যৌথ উদ্যোগে যেন আরও ভালোভাবে সবকিছু আয়োজন করা হয়। সেজন্য মেলার আগে সপ্তাহে অন্তত দু’দিন বিশ্বভারতীর সঙ্গে বৈঠক করতে জেলা প্রশাসনকে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। প্রয়োজনে, স্থানীয় প্রতিনিধি হিসেবে বিষয়গুলি মহাকুমা শাসককেও পর্যবেক্ষণ করার কথাও বলা হয়েছে।
বৈঠকের পর জেলাশাসক বলেন, মেলার মাঠ সংলগ্ন জলাশয়গুলি সংস্কার করা যায় কি না, এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। মেলাকে পরিবেশবান্ধব করতে প্রতিটি বিষয়ে নজর রাখা হবে। তার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে বায়ো-টয়লেট বসানো হবে। মেলা প্রাঙ্গণে প্লাস্টিক কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হবে। পরিবর্তে কাগজের ব্যাগকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। ধূমপান, মদ্যপান করলে প্রশাসন কড়া ব্যবস্থা নেবে। স্থানীয় হস্তশিল্পীরা যাতে মেলায় বসতে পান, সেদিকেও আমরা সচেষ্ট হব।
মেলার পর প্রতিবছর স্টল গোটানো নিয়ে ব্যবসায়ীরা গড়িমসি করেন। এ বছর যাতে তা না হয় প্রশাসন কড়া ভূমিকা পালন করবে বলে জেলাশাসক জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এবছর মেলা ৬ দিনের। ২৩ থেকে ২৮ ডিসেম্বর। সেই তারিখ শেষ হতেই রাত ১২টা থেকে সকাল ছটার মধ্যে স্টল গোটানোর প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করব। মেলার পরবর্তী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে পূর্বপল্লির মাঠকে পূর্বাবস্থায় ফেরানো হবে। জেলা প্রশাসনের এই ভূমিকায় অত্যন্ত খুশি কর্তৃপক্ষ। বিশ্বভারতী কর্মী পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক দেবাশিস রায় বলেন, স্টল বুকিং ও বণ্টনের ক্ষেত্রে অনভিপ্রেত ঘটনা ও জালিয়াতি এড়াতে পুলিসের নিরাপত্তা চাওয়া হয়েছে। জেলা ও রাজ্য প্রশাসন যেভাবে এগিয়ে এসেছেন, তাতে আমরা আপ্লুত।