স্বেচ্ছায় আবাস প্রকল্পে নাম বাদ, সমাজে সততার বার্তা দিতে ২৭০ জনকে সংবর্ধনা
বর্তমান | ০২ ডিসেম্বর ২০২৪
সুমন তেওয়ারি, সিউড়ি: এ যেন পাঁকের মধ্যেই পদ্ম ফোটা! নানা সরকারি প্রকল্পে বেনিয়ম নিয়ে বার বার সরগরম হয়েছে রাজ্য-রাজনীতি। তারমধ্যে অন্যতম বাংল আবাস প্রকল্প। সমাজের অনেক বিত্তশালীরাও কোনও এক যাদুবলে বাড়ি পেয়ে যাচ্ছেন বলে বিরোধীদের অভিযোগ। আবার অনেকের বিশাল পাকাবাড়ি থাকা সত্ত্বেও সরকারি ঘর পেতে ছলচাতুরির আশ্রয় নিচ্ছেন। কেউ পাচ্ছেন, কেউ ধরা পড়ে যাচ্ছেন। কিন্তু সবাই যে একরকম নয়, সেটাই এবার প্রমাণ করে দিল বীরভূমের ২৭০ জন উপভোক্তা। মন্দজনের ভিড়ে এই সংখ্যাটা নেহাৎ কম নয়! তাই, জেলা প্রশাসন কুর্নিশ করার পাশাপাশি সমাজে স্বচ্ছতা, সততার বার্তা দিতে প্রকাশ্যে সংবর্ধনা দেওয়ার আয়োজন করেছে।
ইতিমধ্যেই আবাসের চূড়ান্ত তালিকা সরকারি অফিসগুলিতে টাঙানো হয়েছে। তা দেখতে গরিব মানুষের উপচে পড়া ভিড়। পাতা উল্টে উল্টে দেখছেন তাঁদের নাম রয়েছে কিনা। অনেকটা যেন পরীক্ষার মেধা তালিকা দেখার মতো। কারও নাম উঠলে আনন্দে লাফিয়ে উঠছেন তিনি। ছ’ বছরের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান। বাড়ি পাচ্ছেন তিনি। কারও নাম বাদ পড়লে প্রশাসনিক অফিসের সামনেই হতাশায় ভেঙে পড়েছেন। তবে, বেশিরভাগ গরিব মানুষের মুখেই হাসি ফুটেছে। কারণ, তাঁরা উপযুক্ত উপভোক্তা। সরকারি তথ্য বলছে, বীরভূমেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলার বাড়ি পেতে চলেছেন ১ লক্ষ ৩ হাজার ৩৮২ জন। যদিও এই তালিকা চূড়ান্ত নয়। প্রশাসন সূত্রে খবর, গ্রাম সভায় অনুমোদনের পরই প্রশাসনিক স্তরে চূড়ান্ত সিলমোহর পড়বে।
খুঁটিয়ে সমীক্ষার পর অযোগ্যদের ছেঁটে ফেলতেও কার্পণ্য করেনি প্রশাসন। ৩১ হাজার ৪৭১ জনের নাম অযোগ্য হিসেবে বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া ৩ হাজার ৭১৫ জনের নাম সাময়িক ভিনরাজ্যে থাকা, উত্তরাধিকারী না থাকা, আবেদনকারীর মৃত্যু সহ নানা কারণে বাদ পড়েছে। আবার ৮৩৭ জন উপভোক্তার নাম রয়েছে, যাঁদের চিহ্নিতই করা যায়নি। ২০১৮ সালের এই তালিকা। তারপর স্থায়ীভাবে এলাকা ছাড়ার ঘটনা স্বাভাবিক বলেই মনে করছে জেলা প্রশাসন। বীরভূমের জেলাশাসক বিধান রায় বলেন, ‘এবার রাজ্য সরকারের লক্ষ্যই ছিল গরিব মানুষ যেন কোনও ভাবেই সরকারি বাড়ি পাওয়া থেকে বঞ্চিত না হন। এই পরিস্থিতিতেও জেলার প্রায় তিনশো মানুষ নিজে থেকে এগিয়ে এসে প্রকল্প থেকে নাম বাদ দিতে অনুরোধ করেছেন। এটা একটা দৃষ্টান্ত। যাঁরা মনে করছেন তাঁরা যোগ্য হওয়া সত্বেও তালিকা থেকে না বাদ দিয়েছেন বা কোন অযোগ্যর তালিকায় নাম থেকে গিয়েছে উভয়ক্ষেত্রেই প্রশাসনিক অফিসে আপত্তি জানানোর সুযোগ রয়েছে। আমরা সেগুলি ফের তদন্ত করছি।’
শুক্রবার সকাল দশটা। তখনও পুরন্দরপুরে সিউড়ি বিডিও অফিসে কোনও কর্মী বা আধিকারিক আসেননি। অফিসের সামনে থিক থিক করছে ভিড়। সবার নজর ব্লক অফিসের সামনে টাঙানো আবাসের তালিকার দিকে। তালিকা থেকে নাম বাদ পড়েছে বনসংখ্যা গ্রাম পঞ্চায়েতের দিবাকর সাহা ও রামপ্রসাদ সাহার। তাঁরা বলেন, ‘আমাদের মাটির বাড়ি দেখে এসেও কী করে তালিকা থেকে নাম বাদ দিলেন, তা বোধগোম্য হচ্ছে না। অথচ, আমাদের এলাকার পাকা বাড়ি থাকা লোকের নাম তালিকায় রয়েছে।’ অন্যদিকে, নাম বাদ পড়েছে প্রভাবশালী নেতাদের বহু ঘনিষ্ঠজনের। খয়রাশোল, মুরারই-২, রামপুরহাট-২ ব্লকগুলিতে বহু নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, সবকিছুকেই ছাপিয়ে গিয়েছে ওই ২৭০ জন উপভোক্তা। কার নাম উঠল? তালিকায় চোখ আবেদনকারীদের। নিজস্ব চিত্র