পুরুলিয়ার নিজস্ব খাদ্যাভাসে থাবা চাইনিজের ঘুরতে এসে পর্যটকরা আজও খোঁজেন পাতাপোড়া মাংস
বর্তমান | ০২ ডিসেম্বর ২০২৪
পিনাকী ধোলে, পুরুলিয়া: হুগলির শ্রীরামপুর থেকে বাইক নিয়ে রবিবার অযোধ্যায় বেড়াতে এসেছিল একদল বন্ধু। সন্ধ্যার সময় অযোধ্যায় উঠেই তাদের খোঁজ শুরু হল শালপাতায় পোড়া মাংসের। হিলটপের একের পর এক দোকানে ঢুঁ মারতে থাকল বন্ধুরা। প্রায় সমস্ত দোকান ঘুরে চাউমিন, এগরোল, চিলি চিকেন, পকোড়া এমনকী মোমো মিললেও খোঁজ পাওয়া গেল না পাতা পোড়া মাংসর! এক বন্ধু তো বিদ্রুপ করে বলেই দিল, এসব খাবার তো সব জায়গাতেই পাওয়া যায়। অযোধ্যার মতো জায়গায় পুরুলিয়ার নিজস্বতা বলে কিছু থাকবে না?
লীলা মজুমদারের গল্পে পদিপিসি একবার শুধু ঘাস দিয়ে এইসা চচ্চড়ি রেঁধেছিলেন, খেয়ে বড়লাট একেবারে থ! শালপাতায় পোড়া মাংসও ঠিক তেমনই। ছোট ছোট করে কাটা মাংসের সঙ্গে সামান্য সর্ষের তেল, নুন, হলুদ, জিরে, থেঁতো করা আদা আর কয়েককোয়া রসুন। সব এক সঙ্গে মেখে শালপাতায় মুড়ে ঢিমে আঁচে কিছুক্ষণ রাখলেই হল। তারই স্বাদ নিতে সুদূর হুগলি থেকে অযোধ্যায় এসেছিলেন সৌম্য, রাহুল, দেবাশিস সহ অন্তত জনা আটেক বন্ধু। কিন্তু, প্রাথমিকভাবে কিছুটা হতাশই হতে হল তাঁদের। সৌম্য বলছিলেন, বছর দুয়েক আগে ঘাটশিলা এসে রাস্তার ধারে একবার মাত্র ৫০টাকা দিয়ে শালপাতায় পোড়া মাংস খেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম পুরুলিয়াতেও পাব সেরকম কিছু। কিন্তু পেলাম না।
হিলটপের একটি ফাস্টফুডের দোকানের কর্মী বিষ্ণু বর্মা বলেন, ‘কাবাব থেকে শুরু করে শালপাতায় পোড়া মাংস, হোম স্টে, রিসর্টে বললে ওরা বানিয়ে দেয়। আমরা যারা রাস্তার ধারের দোকানে ব্যবসা করি, এসব তৈরি করি না। আগে থাকতে অর্ডার করলে অবশ্য বানিয়ে দেওয়া যায়। পাশ থেকে বন্ধুদের গ্রুপের রাহুলের সোজা জবাব, আগে অর্ডার দেওয়ার কী আছে? পাহাড়ে চাউমিন, এগরোল পকোড়া লোকে কিনে খেলে শালপাতা পোড়া মাংস খাবে না, তা কি হয়?
পর্যটকরাই জানাচ্ছেন, পুরুলিয়ার বিভিন্ন হোটেলেই এখন চাইনিজ খাবারের রমরমা। যা আর পাঁচটা হোটেলে পাওয়া যায়। তবে পর্যটকরা যদি হোটেল, রিসর্টে দেশি মুরগির ঝোল কিংবা পাতা পোড়া মাংস খেতে চান, সেক্ষেত্রে তাঁদের ভালোই গাঁটের কড়ি খরচ করতে হচ্ছে। এনিয়ে কথা হচ্ছিল বারেডি ঝর্ণার কাছে একটি রিসর্ট মালিকের সঙ্গে। তিনিই জানান, বারবিকিউ চিকেন কিংবা শালপাতায় মোড়া মাংস করতে কেজি প্রতি আমরা ৮০০টাকা করে নিই। এত খরচ কেন? তাঁর জবাব, মাংস ২০০ টাকা কেজি। তার উপর মশলাপাতি থেকে শুরু করে রাঁধুনি খরচা তো আছেই। এনিয়ে পর্যটকদের আক্ষেপ, যত দিন যাচ্ছে, পুরুলিয়া ভ্রমণ ততই যেন ব্যয়বহুল হয়ে যাচ্ছে! মনের মতো খাবার থেকে থাকার হোটেল কিংবা রিসর্ট, সব জায়গাতেই গুনতে হচ্ছে মোটা টাকা।