• মারধরে রাজমিস্ত্রির মৃত্যু অভিযুক্ত তৃণমূল কর্মী ধৃত
    বর্তমান | ০২ ডিসেম্বর ২০২৪
  • সংবাদদাতা, জঙ্গিপুর: মারধরে রঘুনাথগঞ্জের এক রাজমিস্ত্রির মৃত্যুর ঘটনায় রবিবার ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়। মৃতের নাম আতাবুল রহমান ওরফে কালু(৫৭)।  বাড়ি মুকুন্দপুরে। আবাস যোজনার বাড়ি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে তাঁর কাছ থেকে টাকা নেয় এক তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী। কিন্তু, আবাস তালিকায় নাম ওঠেনি। বাড়ি না পেয়ে টাকা ফেরত চাইতে গেলে ওই তৃণমূল কর্মী আতাবুল সাহেবকে বেধড়ক মারধর করে বলে অভিযোগ। রবিবার সকালে কলকাতার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। সেই খবর আসতেই দুপুরে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। স্থানীয় বাসিন্দারা টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। দোষীকে গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে পথে নামে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিও। শেষমেশ পুলিস অভিযুক্ত আব্দুল লতিফ ওরফে মিঠুনকে গ্রেপ্তার করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। পুলিস জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত চলছে।


    বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী মহম্মদ আখরুজ্জামান বলেন, অত্যন্ত নিন্দনীয় ঘটনা। যে বা যারা দলের নাম করে সাধারণ মানুষের কাছে টাকা তুলেছে, মানুষের উপর অত্যাচার করেছে, তাদের রেয়াত করা হবে না। পুলিসকে বলেছি, আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে।


    পুলিস ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় সাত মাস আগে আবাস যোজনার বাড়ি পেতে আতাবুল সাহেবের কাছ থেকে ৩০০০ টাকা নেয় আব্দুল লতিফ। তাঁর নাম আবাস তালিকায় আসবে বলে জানানো হয়। সম্প্রতি আবাস যোজনার তালিকা প্রকাশ পায়। তাতে নাম আসেনি আতাবুল সাহেবের। টাকা দিয়েও বাড়ির নাম না আসায় শনিবার সন্ধ্যায় মুকুন্দপুর মোড়ে চায়ের দোকানে লতিফকে ধরেন আতাবুল সাহেব। তাঁর নাম আবাস তালিকায় আসেনি বলে জানান। এরপর তিনি লতিফের কাছ থেকে ৩০০০ টাকা ফেরত চান। তা নিয়েই বচসা বাধে। শুরু হয় হাতাহাতি। তখনই তাঁকে বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। 


    স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে সেখান থেকে তাঁকে বহরমপুরে মেডিক্যালে ও কলকাতা এনআরএস মেডিক্যালে স্থানান্তরিত করা হয়। রবিবার সকাল সোয়া ৯টা নাগাদ সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় আতাবুল সাহেবের মৃত্যু হয়। মৃত্যুর খবর গ্রামে ছড়িয়ে পড়তেই মুকুন্দপুর মোড়ে স্থানীয় বাসিন্দারা বিক্ষোভ দেখান। টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ করা হয়। সিপিএম ও কংগ্রেসও বিক্ষোভে শামিল হয়। তারা অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারের দাবি জানায়।


    কংগ্রেসের জঙ্গিপুর মহকুমা সংখ্যালঘু সেলের চেয়ারম্যান মহম্মদ মীর কাশিম বলেন, তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা কর্মীরা এলাকায় সন্ত্রাসের বাতাবরণ তৈরি করে রেখেছে। সেটা আবার তারা প্রণাম করল। একজন শ্রমিককে বাড়ি দেওয়ার নাম করে টাকা নেয়। টাকা ফেরত চাইতে গেলে তাকে খুন করে দেওয়া হয়। কী অবস্থা ভাবুন! অভিযুক্তের কঠোর সাজা হওয়া উচিত।


    সিপিএমের মিঠিপুর এরিয়া কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান বলেন, তৃণমূলের নেতা কর্মীরা সব এলাকায় টাকা তুলেছে। আতাবুল সাহেব খেটেখুটে সংসার চালাতেন। বাড়ি পাওয়ার আশায় তিনি টাকা পর্যন্ত দিয়েছিলেন। আবাস তালিকায় নাম না উঠলে তিনি টাকা ফেরত চাইতে যান। তখন তৃণমূলের দুষ্কৃতী তাঁকে খুন করে। 


    রঘুনাথগঞ্জ-২ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি ইউসুফ শেখ বলেন, অভিযুক্ত দলীয় কোনও পদে নেই। সে দলের নাম করে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা তুলে অন্যায় করেছে। তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে প্রশাসন তাকে আইন অনুযায়ী সাজা দেবে।
  • Link to this news (বর্তমান)