নিজস্ব প্রতিনিধি, কোচবিহার: শনিবার রাত ১২টায় কোচবিহারের রাসমেলা ‘অফিসিয়ালি’ শেষ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু রবিবারও বেলা গড়াতেই রাসমেলায় ক্রেতাদের ভিড় বাড়তে থাকে। কেনাকাটার হিড়িক পড়ে যায়। তাই ভাঙা মেলায় কার্যত দিনভর চুটিয়ে ব্যবসা করলেন দূর-দূরান্ত থেকে মেলায় পসরা নিয়ে বসা দোকানিরা। ব্যবসায়ীরা এবার প্রথম থেকেই মেলায় তেমন বিক্রি হচ্ছে না বলে দাবি করেছিলেন। শেষ তিন দিন যদিও মেলায় বিক্রির পরিমাণ ভালোই ছিল। সব মিলিয়ে প্রায় ১৫০ কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে বলে ব্যবসায়ী সমিতি সূত্রেই জানা গিয়েছে।
এবার প্রথম থেকেই রাসমেলা ১৫ দিনের হবে না ২০ দিনের, তা নিয়ে কোচবিহার জেলা প্রশাসন ও পুরসভার মধ্যে টানাপোড়েন চলছিল। প্রশাসন আগেই জানিয়েছিল, মেলা ১৫ দিনের হবে। কিন্তু পুরসভা ব্যবসায়ীদের স্বার্থে রাসমেলা ২০ দিন করার দাবি জানিয়েছিল। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকেও মেলার দিন বৃদ্ধির দাবি জানানো হয়েছিল। কিন্তু জেলা প্রশাসন শেষ পর্যন্ত এ বিষয়ে কার্যত অনড় ভূমিকা পালন করে। ফলে শনিবার রাতেই মেলা শেষ হয়ে গিয়েছে। রবিবারের ভাঙা মেলার চিত্রটা ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। দেখা যায় মেলা শেষ হতেই একাংশ ব্যবসায়ী তাঁদের কাঠামো ভেঙে বিক্রির জন্য নিয়ে আসা সামগ্রী গুটাতে শুরু করেছেন। তবে বহু ব্যবসায়ী পসরা না গুটিয়ে সূর্যের আলো থাকা পর্যন্ত চুটিয়ে ব্যবসা করেন। এতে কিছুটা হলেও ওই দোকানিদের মুখে হাসি ফুটেছে।
এদিকে, মদনমোহন মন্দিরেও দিনভর ভিড় ছিল। রাজমাতা ও ডাঙরআই মন্দিরের বিগ্রহ ফিরে গিয়েছেন। এদিনও বারান্দায় অধিষ্ঠান করে ভক্তদের দর্শন দিয়েছেন মদনমোহন। রাস উৎসব উপলক্ষ্যে রাসযাত্রা শুরুর দিন থেকে টানা ১৫ দিন সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মন্দিরের বারান্দায় অধিষ্ঠান করে ভক্তদের দর্শন দিয়েছেন। তাঁকে ঘিরেই রাস উৎসব ও এতবড় রাসমেলার আয়োজন। সেই মদনমোহনই এদিন পূর্বের নিয়ম অনুসারে রাত ৮টায় শয়ানে যান। যদিও এদিন মন্দিরের দরজা খোলা ছিল রাত ১০টা পর্যন্ত।
কোচবিহার পুরসভার চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ রবিবার বলেন, মেলা আরও পাঁচ দিন থাকা প্রয়োজন ছিল। তাহলে ব্যবসায়ীরা হাসি মুখে যেতে পারতেন। আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমরা সেটা করতে পারলাম না। মেলা বসতেই তো পাঁচ-ছয় দিন লাগে। সব মানুষ এক সঙ্গে আসতে পারে না। ভাঙা মেলাতেও এদিন মানুষ কেনাকাটা করেছে।
কোচবিহার জেলা ব্যবসায়ী সমিতির চেয়ারম্যান সুরজকুমার ঘোষ বলেন, রবিবার ভাঙা মেলায় ব্যবসায়ীরা চুটিয়ে ব্যবসা করেছেন। যতক্ষণ দিনের আলো ছিলো ততক্ষণ তাঁরা ব্যবসা করেছেন। মেলায় এদিন প্রচুর ক্রেতা ছিলেন। এতে আমরা খুশি। শনিবারও কয়েক হাজার ক্রেতা কেনাকাটা করেছেন গভীর রাত পর্যন্ত। সব মিলিয়ে রাসমেলায় এবার প্রায় দেড়শো কোটি টাকার ব্যবস্যা হয়েছে। খাতায়কলমে শেষ হলেও ব্যাপক ভিড় রাসমেলায়। রবিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।