• জিএসটির গেরোয় আয় কমছে পুরসভাগুলির, করের বোঝা বাড়ানোর দাওয়াই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের
    বর্তমান | ০২ ডিসেম্বর ২০২৪
  • বাপ্পাদিত্য রায়চৌধুরী, কলকাতা: দেশে পণ্য ও পরিষেবা কর বা জিএসটি ব্যবস্থা চালু হয়েছিল ২০১৭ সালে। তারপর থেকে ধারাবাহিকভাবে কমেছে পুরসভাগুলির নিজস্ব আয়। ফলে আর্থিকভাবে ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে পুরসভাগুলি। সাম্প্রতিক রিপোর্টে এমনটাই স্পষ্ট করে জানিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া। সেই সঙ্গে তাদের দাওয়াই, পুরসভাগুলি নিজস্ব আয় বাড়াতে গেলে সাধারণ মানুষের উপর করের বোঝা বাড়াতে হবে। তা না হলে উন্নয়নমূলক কাজ বা নাগরিক পরিষেবা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হতে পারে তাদের। প্রত্যক্ষ কর ব্যবস্থার সরলীকরণের উদ্দেশ্যে চালু হয়েছিল জিএসটি। সেই পথে হাঁটতে গিয়ে বিলুপ্তি ঘটেছে পুরনো একাধিক কর প্রথার। পুরসভার বিভিন্ন করও সেই ফাঁদে পড়েছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বলছে, অকট্রয়, এন্টারটেইনমেন্ট ট্যাক্স, অ্যাডভার্টাইজমেন্ট ট্যাক্সের মতো নানা ধরনের করের বিলুপ্তি ঘটেছে। তার বদলে যে জিএসটি আদায় হচ্ছে, তা চলে যাচ্ছে রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারের ভাঁড়ারে। আরবিআইয়ের হিসেব, ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষেও পুরসভাগুলির সামগ্রিক আয়ের মধ্যে নিজস্ব রাজস্ব ছিল ৭৪ শতাংশ। তার পরের বছরগুলিতে লাগাতার কমেছে রাজস্বের ভাগ। পরের পাঁচ বছরে সেই হার গড়ে ৬০ শতাংশে নেমে এসেছে। অর্থাৎ পুরসভাগুলির কর ও অন্যান্য খাতের আদায় নেমে গিয়েছে ১৪ শতাংশ। পুরসভাগুলি বিভিন্ন উৎস থেকে যে আয় করে, তার মধ্যে কর বাবদ রাজস্ব আদায়ের হার ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষে ছিল ৪২.৮ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে তা নেমে এসেছে ২৯.৬ শতাংশে।


    তাহলে পুরসভাগুলি চলছে কীভাবে? রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বলছে, তাদের কেন্দ্রীয় সরকারি গ্রান্ট বা রাজ্য সরকারি অনুদানের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। অর্থাৎ, আর্থিকভাবে পুরসভাগুলি সরকারের উপর আরও নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। জিএসটি আইন অনুযায়ী পণ্য ও পরিষেবা কর বাবদ আদায় হওয়া টাকা ভাগ হয়ে যায় রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রের মধ্যে। পুরসভাগুলিকে তার হকের টাকা দেওয়ার কোনও আইন নেই। রাজ্য সরকারগুলি তার জিএসটির ভাগ থেকে পুরসভাগুলিকে চাইলে টাকা দিতে পারে। কিন্তু এক্ষেত্রে আইনি কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। 


    আরবিআইয়ের দাবি, দেশের অন্তত ৪০ শতাংশ রাজ্যে রাজস্ব ঘাটতি চলছে। সাধারণ মানুষ গ্রাম থেকে শহরে আসছে। আরও বেশি নগরায়ন ঘটছে। তার জন্য পরিকাঠামো তৈরিতে পুরসভাগুলিকে জোর দিতে হচ্ছে। সেই সঙ্গে পুরসভার নতুন ও পুরনো বাসিন্দাদের আরও উন্নত নাগরিক পরিষেবা চাহিদা রয়েছে। পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে. তাতে সেই চাহিদা আগামী দিনে পূরণ করা সম্ভব নাও হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। তাহলে উপায়? আরবিআই যে সুপারিশগুলি করেছে, তার মধ্যে রয়েছে রাজস্ব বৃদ্ধির একাধিক প্রস্তাব। সম্পত্তি করের সংস্কার এবং পরিষেবাজনিত করের সংস্কারের কথা বলা হয়েছে সেখানে। মোদ্দা কথা, দু’টি ক্ষেত্রেই কর বৃদ্ধি ছাড়া উপায় নেই বলে বুঝিয়ে দিয়েছে আরবিআই। পানীয় জল, নিকাশি, থেকে শুরু করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা—বিভিন্ন নাগরিক পরিষেবা খাতে কর বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে তারা। হিসেবে আরও স্বচ্ছতা এবং দক্ষভাবে কর আদায়ের নিদান দিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। অর্থাৎ ‘ফ্যালো কড়ি মাখো তেল’ নীতির কথা বলছে খোদ কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক।
  • Link to this news (বর্তমান)