• ভিসায় নিয়ন্ত্রণ, দু’দেশের বাণিজ্যে ভাটা হিলি সীমান্তে, চিন্তায় ব্যবসায়ীরা
    এই সময় | ০২ ডিসেম্বর ২০২৪
  • এই সময়, বালুরঘাট: অশান্ত বাংলাদেশে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার কোনও ইঙ্গিত এখনও নেই। যার প্রভাব পড়েছে ভারত–বাংলাদেশ বানিজ্যিক এবং কূটনৈতিক সম্পর্কে। এই অশান্তির আবহে দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি সীমান্তের অভিবাসন দপ্তর ‘মেডিক্যাল গ্রাউন্ড’ ছাড়া বাংলাদেশি নাগরিকদের ভিসা দেওয়া বন্ধ করেছে।

    যার প্রভাব পড়েছে এই সীমান্তের ব্যবসা–বাণিজ্যে। রবিবার থেকে হিলি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে আলু রপ্তানিও বন্ধ হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। বাংলাদেশ নিয়ে ঘোর দুশ্চিন্তায় বিএসএফের উত্তরবঙ্গ শাখাও। প্রায় ন’শো কিলোমিটার সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব পালন করছেন বিএসএফের চারটি সেক্টরের জওয়ানরা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশে সীমান্তে নজরদারির জন্য বাড়তি জওয়ান মোতায়েন করা হয়েছে। চলছে চব্বিশ ঘণ্টার পাহারা।

    বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের প্রতিবাদে আগেই সুর চড়িয়েছিল বঙ্গ–বিজেপি। আজ, সোমবার উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁর পেট্রাপোল সীমান্তে বিধানসভার বিরোধী দ‍লনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিক্ষোভ দেখাতে যাওয়ার কথা বিজেপি বিধায়কদের। ওই সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশগামী পণ্যবাহী ট্রাক আটকানোর পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের। আজই আবার কোচবিহারের চ্যাংড়াবান্ধা সীমান্তের জি়রো পয়েন্টে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামবে ‘সনাতনী ঐক্য মঞ্চ’ নামে একটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠনও।

    তারাও সীমান্তে পণ্যবাহী ট্রাক আটকানোর পরিকল্পনা করেছে বলে খবর। এই সংগঠনের পাশাপাশি আরও বেশ কিছু হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ও পদ্ম–নেতাদেরও থাকার কথা সেখানে। এর জেরে আগামীতে রাজ্যের বেশ কিছু সীমাম্তবর্তী এলাকায় দু’দেশের বাণিজ্য ধাক্কা খেতে চলেছে বলে ধারণা ওয়াকিবহাল মহলের।

    বাং‍লাদেশের সঙ্গে এখনও সরকারি ভাবে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করেনি ভারত সরকার। কিন্তু ভিসা ইস্যুতে কড়াকড়ির জন্য বাংলাদেশিদের এ দেশে আসা নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। হিলি স্থলবন্দর চত্বরের ব্যবসায়ী সঞ্জীব মজুমদারের কথায়, ‘আগে প্রতিদিন প্রচুর মানুষ পারাপার করতেন হিলি সীমান্ত দিয়ে। এতে প্রতিদিন গড়ে ৭০০০-৮০০০ টাকার বিক্রি হতো আমাদের। এখন বাংলাদেশের পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার জন্য নতুন করে ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। শুধু মেডিক্যাল গ্রাউন্ডে ভিসা দেওয়া হচ্ছে। ফলে কেনাকাটা অনেক কমে গিয়েছে।’

    হিলি অভিবাসন দপ্তরের আধিকারিক দিলীপ সরকার তথ্য দিয়ে বলেন, ‘এই সীমান্ত দিয়ে আগে প্রতিদিন ৪০০-৫০০ জন পারাপার করত। কিন্তু এখন সেটা দাঁড়িয়েছে ৭০-১০০ জনে।’ রবিবার থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে আলু রপ্তানিও বন্ধ হয়ে গেল। এতদিন আলু, পেঁয়াজ, ভুষির লরি মিলিয়ে গড়ে ১৭০টি পণ্যবাহী ট্রাক বাংলাদেশে যেত। এখন সেটা কমে দাঁড়াল একশোর নীচে। এর ফলে ব্যবসায়ীরা বড়সড় ক্ষতির আশঙ্কা করছেন। হিলি এক্সপোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক ধীরাজ অধিকারী বলেন, ‘গত ২৮ তারিখ পর্যন্ত রাজ্য সরকার ছাড় দেওয়ায় সুবিধা পোর্টালে আলু–পেঁয়াজ রপ্তানির স্লট বুকিং হচ্ছিল। এখন আর আলুর স্লটও বুকিং করা যাচ্ছে না। পেঁয়াজ ও অন্যান্য সামগ্রীর স্লট বুকিং অবশ্য হচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।’

    রবিবার বিকেলে হিলি স্থলবন্দর পরিদর্শন করেন বালুরঘাটের বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার। এই সীমান্ত দিয়ে রোজ কত মানুষ পারাপার করছেন, তা জানতে তিনি বিএসএফ জওয়া‍নদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আগে গড়ে প্রায় এক হাজার মানুষ পারাপার করতেন হিলি বর্ডর দিয়ে। এখন অনেক কমে গিয়েছে। কারণ, ভারত সরকার নতুন করে ভিসা দিচ্ছে না। কেবলমাত্র মেডিক্যাল ভিসা দেওয়া হচ্ছে।’

    প্রতিদিনই বাংলাদেশে থেকে বহু মানুষ ভারতে চিকিৎসা করাতে আসেন। বাংলাদেশের পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হতে থাকায় তাঁদের অনেকেই চিকিৎসা মাঝপথে ফেলে নিজের দেশে ফিরে যেতে শুরু করেছেন। রবিবারই হিলি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ ফিরে যান অরুণচন্দ্র দেবনাথ, স্মৃতি দেবনাথ, মৃদুল গোস্বামীর মতো আরও অনেকেই। উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে তাঁরা বলেন, ‘বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ ফিরতে হচ্ছে। সেখানে আমাদের পরিবার আছে। তাঁদের কথা ভেবে নিশ্চিন্তে ভারতে বসে থাকতে পারছি না।’

    এই আবহে বাংলাদেশিদের একশো শতাংশ ভিসা বন্ধ করার দাবি তুলে চলেছেন শুভেন্দু। তিনি জানান, ভিসা দেওয়া চালু থাকলে অভিবাসন দপ্তরগুলিতেও প্রয়োজনে চড়াও হবে তারা। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে নিশানা করে শুভেন্দুর হুঁশিয়ারি, ‘চিকিৎসার জন্য করাচি আর লাহোরে যান। ভারতে আসবেন না।’

    বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক লেনদেন বন্ধ করার ক্ষেত্রে বিজেপির এই তৎপরতা সম্পর্কে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘পদক্ষেপ তো কেন্দ্রীয় সরকারকে নিতে হবে। বিজেপি রাজনৈতিক লাভের জন্য বাংলাদেশে ঘটনাকে ব্যবহার করছে। বিজেপি নেতারা পেট্রোপোল সীমান্তে গিয়ে কী করবেন! বাংলা অচল করে কী হবে? দিল্লি যান। সেখানে গিয়ে যা বলার বলুন। এটা আন্তর্জাতিক ইস্যু।’
  • Link to this news (এই সময়)