হতাশ দর্শনার্থী। বিরক্ত ব্যবসায়ী। আর উদ্যোক্তারা নিরুপায়! চকিতে রাসমেলার শেষ দিনের ছবি এমনটাই। কোচবিহার পুরসভার উদ্যোগে গত ১৬ নভেম্বর শুরু হয়েছিল রাসমেলা। শেষ হলো ৩০ নভেম্বর, শনিবার। আর মেলা শেষে জানা গেল, গতবারের তুলনায় এ বারে ব্যবসা কমে গিয়েছে প্রায় ১০০ কোটি টাকার। মেলার দিনসংখ্যা কমে যাওয়ার কারণেই এমনটা হয়েছে বলে দাবি উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের একাংশের।
কোচবিহারের পুরপ্রধান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ জানান, ২০২৩ সালে রাসমেলায় প্রায় ২৫০ কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছিল। এ বার সেই অঙ্ক কমে দাঁড়িয়েছে ১৩০-১৪০ কোটি টাকায়। আরও অন্তত পাঁচ দিন মেলা হতেই পারত। রাজাদের আমলে একমাস ধরে মেলা চলত। সেটা কমতে কমতে ২০ দিনে এসে দাঁড়িয়েছিল। এ বার ১৫ দিনেই মেলা শেষ করতে হলো। যাঁরা বাইরে থেকে ব্যবসা করতে এসেছিলেন তাঁরা ভালো ভাবে ব্যবসাটাই করতে পারলেন না।
প্রায় দু’-দশকেরও বেশি সময় ধরে কোচবিহার রাসমেলায় জামা, কাপড়, শীতবস্ত্রের দোকান দিচ্ছেন কলকাতার গড়িয়ার বাসিন্দা রঞ্জিত দাস। মেলার শেষদিন তিনি বলেন, ‘এরপরে আর রাসমেলায় আসা যাবে না। আগের চেয়ে খরচ অনেক বেড়ে গিয়েছে। তার উপরে আবার মেলার দিনও কমিয়ে দেওয়া হলো। মাস শুরুর আগেই শেষ হয়ে গেল মেলা। ব্যবসা জমল কই!’
দিল্লি থেকে রাসমেলায় এসেছিলেন মহম্মদ ইসাইল। তিনি জানান, প্রতিবার লুধিয়ানা থেকে শীতের পোশাক নিয়ে তিনি মেলায় আসেন। মেলার শেষ চার-পাঁচ দিন ভালো ব্যবসা হয়। কিন্তু এ বারে তা হয়নি। শেষ দিনের মেলায় অসমের বঙাইগাঁও থেকে সপরিবার এসেছিলেন রাজীব বণিক। তাঁর বক্তব্য, ‘মাসের শেষ। তবুও জোর করেই শেষদিনের মেলায় এলাম। শুধু ঘুরেফিরে, কিছু খাওয়াদাওয়া সেরেই চলে যাব। এখনও বেতন হয়নি। মাসপয়লার পরে আরও কয়েকটি দিন মেলা চললে কেনাকাটা করতে পারতাম।’
ব্যবসায়ীদেরও অনেকেই জানিয়েছেন, বহু লোকজনের কেনাকাটার ইচ্ছে থাকলেও তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। কারণ, তাঁদের অনেকেই মাসপয়লার বেতন হাতে পাননি। আরও দিন পাঁচেক মেলা চললে ব্যবসা জমে যেত।
কোচবিহার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সুরজকুমার ঘোষ বলছেন, ‘এ বারের রাসমেলা শুরু হয়েছিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে। তার আগে ছিল দুর্গাপুজো, কালীপুজো। ফলে লোকজনের হাতে সে ভাবে টাকাপয়সা ছিল না। এ দিকে, প্রশাসনকে মেলার দিন বাড়ানোর দাবি জানিয়েও লাভ হয়নি। মাসের প্রথম দিকে আরও কয়েকটি দিন মেলা চললে ব্যবসা ভালো হতো।’
পুরসভা সূত্রের খবর, এ বারের রাসমেলা ১৫ দিনের হবে নাকি ২০ দিনের তা নিয়ে পুরপ্রধান রবীন্দ্রনাথ ঘোষের সঙ্গে জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। পুরসভা প্রথম থেকেই চেয়েছিল, মেলা হোক কুড়ি দিনের। কিন্তু প্রশাসনের তরফে অনুমতি মেলেনি। জেলার পুলিশ সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্য বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার কারণে কুড়ি দিনের মেলা করার অনুমতি দেওয়া সম্ভব হয়নি।’ আর পুরপ্রধান বলছেন, ‘এতদিন তো মেলা চলল। আরও পাঁচটা দিন মেলা চললে কী আর এমন ক্ষতি হতো!’