• ধৃত বাংলাদেশির সঙ্গে কি তবে জঙ্গি-যোগ? কাটেনি ধোঁয়াশা
    আনন্দবাজার | ০২ ডিসেম্বর ২০২৪
  • নাম ভাঁড়িয়ে, ভুয়ো পরিচয়পত্র বানিয়ে কলকাতায় থাকা বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেফতারির ঘটনায় তদন্তভার হাতে নিল কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)। সূত্রের খবর, এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন কলকাতার বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন। গোটা বিষয়ে তাদের কাছে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে পুলিশের তরফে। কিন্তু গ্রেফতারির পরে দু’দিন পেরোলেও ধৃত ব্যক্তি কেন নাম ভাঁড়িয়ে এ দেশে থাকছিলেন, সে সম্পর্কে স্পষ্ট উত্তর মেলেনি। এ ক্ষেত্রে কোনও জঙ্গি-যোগ রয়েছে কি না, সেই ধোঁয়াশাও কাটেনি। কলকাতা পুলিশ সূত্রে রবিবার শুধু দাবি করা হয়েছে, ধৃতকে জেরা করে বেশ কিছু তথ্য মিলেছে। কিন্তু ধৃতের মোবাইলটি এখনও উদ্ধার করা যায়নি। সেটি মিললেই এই ঘটনায় আরও বেশ কিছু তথ্য সামনে আসতে পারে বলে মত কলকাতা পুলিশের।

    বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের শীর্ষ স্তরের নির্দেশে গত শুক্রবার রাতে অভিযানে নামে পুলিশ। রাজ্যের বিভিন্ন থানা এলাকায় তল্লাশি চালানো হয়। সেই সময়েই ধর্মতলা সংলগ্ন রফি আহমেদ কিদোয়াই রোডের একটি হোটেল থেকে গ্রেফতার করা হয় সেলিম মাতব্বর নামে এক ব্যক্তিকে। অভিযোগ, তিনি রবি শর্মা নামে ওই হোটেলে উঠেছিলেন। ধৃতের কাছ থেকে এর পরে একটি পাসপোর্ট এবং আধার কার্ড উদ্ধার করে পুলিশ। দু’টি নথিই রবি শর্মার নামে তৈরি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পারে, ওই ব্যক্তির আসল নাম সেলিম মাতব্বর। বাড়ি বাংলাদেশের মাদারিপুরে। বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি (বিএনপি)-র সক্রিয় সদস্য হিসাবে তিনি বাংলাদেশে পরিচিত। জেরায় ধৃত দাবি করেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে গন্ডগোলের জেরেই তিনি দেশ ছেড়েছিলেন।

    কিন্তু ভারতে সেলিম ঢুকলেন কী ভাবে? রবিবার পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, ২০২৩ সালে নদিয়া দিয়ে এ দেশে ঢুকেছিলেন ওই ব্যক্তি। প্রথমে তিনি যোগাযোগ করেছিলেন হাবড়ার এক এজেন্টের সঙ্গে। সেই এজেন্ট তাঁকে কাঁটাতার পেরিয়ে এ দেশে প্রবেশের সুযোগ করে দেন বলে ধৃত জেরায় জানিয়েছেন। ওই এজেন্টের মাধ্যমেই নদিয়ার একটি ঠিকানায় প্রথম একটি আধার কার্ড তৈরি করান সেলিম। এর পরে আরও একটি আধার কার্ড তৈরি করান রাজস্থানের একটি ঠিকানায়। পুলিশ তদন্তে নেমে দু’টি আধার কার্ডই উদ্ধার করেছে। রাজস্থানের সেই আধার কার্ডের সূত্রে এর পরে ভারতীয় পাসপোর্ট তৈরি করেন সেলিম। তাঁর কাছ থেকে দিল্লির একটি ঠিকানায় বেশ কয়েকটি নথিও উদ্ধার হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।

    কিন্তু এই সমস্ত নথি তৈরির উদ্দেশ্য কী? পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, এখনও পর্যন্ত জেরায় ধৃত ব্যক্তি দাবি করেছেন, পর্যটক হিসাবেই সমস্ত নথি তিনি তৈরি করিয়েছেন। কিন্তু অন্য দেশে প্রায় দু’বছর ধরে ভ্রমণের জন্য থেকে যাওয়ার বিপুল খরচ তিনি জোগালেন কী ভাবে? তার স্পষ্ট উত্তর মেলেনি। ধৃতের সঙ্গে আরও কেউ জড়িত কিনা, সেই প্রশ্নেরও উত্তর এখনও অজানা। লালবাজারের এক শীর্ষ কর্তার মন্তব্য, ‘‘জঙ্গি-যোগ থেকে সমস্ত দিক খতিয়ে দেখতে স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্সকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দ্রুত সব উত্তর পাওয়া যাবে।’’

  • Link to this news (আনন্দবাজার)