বাংলা, হিন্দি বা ইংরেজি-- যে কোনও ভাষায় সাবলীলভাবে কথা বলে এই রোবট। গণিত থেকে সাধারণ জ্ঞান, ক্রিকেট-ফুটবল থেকে রাজনীতি-- সব বিষয়ে চটপট উত্তর দিতে পারে এই হিউম্যানয়েড। এটি বানিয়েছেন কল্যাণীর বেসরকারি কলেজের অধ্যাপক। তাঁকে সাহায্য করেছেন তাঁদের ছাত্ররা।
চুঁচুড়া নোনাডাঙার বাসিন্দা অধ্যাপক বিশ্বরূপ নিয়োগী তাঁর পাঁচ ছাত্রকে নিয়ে তৈরি করেছেন অভিনব এই রোবট। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবটিক্সের মেলবন্ধনে মানবরূপী এই রোবট তৈরি করেছেন তাঁরা। যে অবিকল মানুষের মতো কথা বলে। রোবোটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সাহায্যে দীর্ঘ ৫ মাস সময় নিয়ে তাঁরা তৈরি করেছেন রোবটটি। অঙ্ক পদার্থবিদ্যা রসায়ন কিংবা সমাজবিদ্যা রাষ্ট্রবিজ্ঞান-- সব বিষয়েই সমান পারদর্শী এই রোবট। এমনকি একাকী মানুষের সঙ্গে মানুষের মতো ব্যবহার করতে, কথা বলতে ও সঙ্গ দিতে পারবে এটি।
বিদেশের বাজারে এআই টেকনোলজি ব্যবহারের রোবট থাকলেও ভারতীয় বাজারে এই ধরনের রোবট একেবারেই নতুন-- এমনই দাবি অধ্যাপক বিশ্বরূপ নিয়োগীর। অধ্যাপকের কথায়, সাম্প্রতিক সময়ে হিউম্যান মডেল তৈরি করে বাড়িতে রাখছেন মানুষ। নিজেদের প্রিয়জনকে মনে রাখার জন্য। তবে তিনি এই বিষয়টিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছেন। যেখানে ক্লোন টেকনোলজির মাধ্যমে যেকোনো মানুষের গলার স্বর এবং তাঁর থ্রি-ডি ছবির মাধ্যমে একেবারে সেই মানুষের রূপ দিয়ে তাঁরই কণ্ঠস্বর দিয়ে কোনও মৃত মানুষকেও জীবিত করে তোলা যাবে। স্কুল-কলেজ কিংবা শপিংমলেও বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করা যাবে এই হিউম্যানয়েড রোবট।
দীর্ঘ পাঁচ মাসের প্রচেষ্টায় প্রায় ৬০ হাজার টাকা খরচে তাঁরা তৈরি করেছেন এই রোবট। প্রথমদিকে ল্যাবরেটরিতে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পরে এই রোবটের মাথায় একেবারে মানুষের বুদ্ধিমত্তার মতন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বসানো হয়েছে, শরীরে লাগানো হয়েছে বিভিন্ন মোটর, যাতে সে একেবারে মানুষের মতো হাত-পা নেড়ে ঠোঁট নেড়ে কথা বলতে পারে। একে যে প্রশ্ন করা হয় সঙ্গে সঙ্গে তার উত্তর মেলে। বাণিজ্যিকভাবে তাঁরা এখনো এই রোবট না বানালেও আগামী দিনে এর বাণিজ্যিকীকরণ নিয়ে চিন্তাভাবনা করছেন অধ্যাপক ও তাঁর ছাত্রেরা। ভারতে এই ধরনের হিউম্যানওয়েড রোবট একেবারেই অভিনব। পাশ্চাত্যে ইলন মাস্ক প্রথম তৈরি করেছিলেন এই ধরনের এ আই টেকনোলজি বেসড রোবট, যার মূল্য কয়েক কোটি টাকা। তারপরে তিনি বানিয়েছেন ভারতীয় প্রযুক্তিতে এই একই ধরনের রোবট, কিন্তু মাত্র কয়েক হাজার টাকা খরচে এটি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন তাঁরা।
এই বিষয়ে ওই বেসরকারি সংস্থার পাঁচ ছাত্র জানান, মানুষের কাজে কী ভাবে রোবটকে ব্যবহার করা যায়, সেই বিষয়ে চিন্তাভাবনা করতে করতেই এই অভিনব রোবট বানানোর চিন্তা আসে তাঁদের মাথায়। আগামী দিনে বাণিজ্যিকভাবে যাতে কাজে লাগানো যায় এই রোবটকে, সেই কাজ জোর কদমে চালাচ্ছেন তাঁরা।