সাতসকালে চায়ের দোকান খুলে বসেছেন মিনতি বর্মণ। ইটাহার গ্রামীণ হাসপাতাল চত্বরেই তাঁর দোকান। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক রোগীর পরিজন এসে চায়ের অর্ডার দিলেন। চা খেলেনও। কিন্তু গোল বাধল চায়ের বিল মেটাতে গিয়ে।
-- কত হলো বৌদি?
--চা, বিস্কুট আর সিগারেট। মোট ২২ টাকা।
‘এই নিন’ বলে একটা ৫০০ টাকার নোট এগিয়ে দিতেই শীতসকালেও মাথা গরম হয়ে গেল মিনতির। কিন্তু হাজার হলেও ক্রেতা। আর ক্রেতাই লক্ষ্মী। তাই রাগটা সামলে নিচু গলায় ওই মহিলা বললেন, ‘দেখছেনই তো, সদ্য দোকান খুলেছি। ৫০০ টাকার নোট দিলে এত খুচরো কোথায় পাবো? এক কাজ করুন, ফোন পে করুন।’ শেষতক কিউআর কোডটা স্ক্যান করতেই মিটে গেল সমস্যা।
ইন্ডিয়া কতটা ডিজিটাল হয়েছে তা নিয়ে বিতর্ক চলতেই পারে। তবে কিউআর কোডের সৌজন্যে এখন খুচরো নিয়ে ঝামেলা কিংবা ধারের ধাক্কার বহর অনেকটাই কমে গিয়েছে।
গাঁ-গঞ্জে একটা সময় ছিল যখন খুচরো কিংবা ধারের ঝামেলা লেগেই থাকত। সে ঝামেলা শুধু চায়ের দোকানে আটকে থাকত না। বড় নোটের কথা শুনলে বেজার হতেন টোটো চালক। ধারের কথায় ক্ষুব্ধ হতেন পাড়ার মুদি। এখন সকলেই আস্থা রাখছেন কিউআর কোডের উপরে।
মোবাইলেই অনলাইন পেমেন্টের ব্যবস্থা যে মানুষের সুবিধাই করেছে তা টের পাচ্ছেন টোটোচালক নিতাই দাসও। নিতাই আগে পায়ে টানা রিকশা চালাতেন। রিকশা অচল হওয়ার পরে তিনি একটি টোটো কিনেছেন। তাঁর অভিজ্ঞতাও মিনতির মতোই। তিনিও খুচরো ঝামেলা এড়াতে টোটোর সামনে কিউআর কোড সেঁটে দিয়েছেন। নিতাই বলছেন, ‘অল্পবয়সীরা তো বটেই, অনেক বয়স্ক মানুষও এখন টোটোয় উঠলে কিউআর কোড স্ক্যান করেই ভাড়া মেটান।’
ইটাহার ব্লক অফিস চত্বরে চায়ের দোকান রয়েছে তাপস সাহার। তাঁর কথায়, ‘আগে দোকানে একটা বোর্ডে লিখে রাখতে হতো— ‘ধার চেয়ে লজ্জা দেবেন না’। এখন আর সেই বোর্ডের কোনও দরকার নেই। কারণ, বাকির কারবার বন্ধ। এখন কেউ ধারের কথা বললেই এগিয়ে দিই কিউআর কোডের বোর্ডটা।’