বাড়ি বাড়ি পানীয় জল পৌঁছে দিতে হুগলিতে ৮০০ কোটি টাকার কাজ
এই সময় | ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪
এই সময়, চুঁচুড়া: কলে জল আসে সকাল ৬টায়। এই প্রথম দফায় জল থাকে সকাল ৮টা পর্যন্ত। কিন্তু গোঘাটের বালি, শ্যামবল্লভপুর গ্রাম কিংবা দাদপুর ব্লকের পোলবা অঞ্চলের পাউনান গ্রামে রাস্তার ধারের কল থেকে সেই পানীয় জল ধরার জন্য কাকভোরেই বালতি, হাঁড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় পম্পা, সবিতাদের।
কারণ, জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দপ্তরের (পিএইচই) সরবরাহ করা ওই পানীয় জল সকালে দু’ঘণ্টা পাওয়া যায় ঠিকই, তবে কল থেকে জল পড়ে সরু সুতোর মতো। স্বাভাবিক ভাবেই জলের পাত্র ভরতে অনেকটা সময় লেগে যায়। আর সাতসকালের ‘চান্স মিস’ হওয়া মানে আবার সেই বেলা ১১টা।
জলের লাইনে দাঁড়ানো গ্রামবাসীদের মধ্যে ঝগড়া, অশান্তি লেগে থাকে প্রায়শই। গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে এবং স্থানীয় গ্রামসভার সদস্যদের বার বার জানিয়েও জলের সমস্যার কোনও সুরাহা হয়নি বলে গ্রামবাসীদের অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে এ বার দ্রুত বাড়ি বাড়ি জল সরবরাহ করতে উদ্যোগী হয়েছে হুগলি জেলা প্রশাসন।
ঠিক হয়েছে, কেন্দ্রীয় প্রকল্প ‘জল জীবন মিশনে’ ওই কাজ হবে এবং সেটা কার্যকর করবে পিএইচই। হুগলির জেলাশাসক মুক্তা আর্য রবিবার এ ব্যাপারে বৈঠক করে কাজে গতি আনার নির্দেশ দিয়েছেন।
হুগলি জেলায় জল জীবন মিশনে প্রকল্পে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে। কাজ হবে আরামবাগ, চন্দননগর, চুঁচুড়া ও শ্রীরামপুর মহকুমায়। জেলাশাসক মুক্তা আর্য বলেন, ‘চারটি মহকুমাতেই জল জীবন মিশন প্রকল্প নিয়ে সমীক্ষার কাজ শেষ। তার পর রবিবার রিভিউ বৈঠক হয়েছে। সব দপ্তরের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে দ্রুত পরিষেবা দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য।’
বৈঠকে প্রশাসনের আধিকারিকরা, জেলা পরিষদের সভাধিপতি রঞ্জন ধাড়া, কয়েকটি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিরা, বিডিও এবং এসডিও–রা ছিলেন। চুঁচুড়ার বিধায়ক অসিত মজুমদারও উপস্থিত ছিলেন বৈঠকে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিছু দিন আগে ভার্চুয়াল প্রশাসনিক বৈঠকে জল জীবন মিশনের মাধ্যমে ঘরে ঘরে জল পৌঁছে দেওয়ার উপর জোর দিয়েছিলেন। তার পর প্রায় এক মাস ধরে ওই প্রকল্পে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সমীক্ষা করেছেন প্রশাসনের প্রতিনিধিরা। আরামবাগ, চন্দননগর, চুঁচুড়া ও শ্রীরামপুর— মোট চারটি মহকুমার এলাকায় গিয়ে তাঁরা পানীয় জলের পরিষেবা নিয়ে সাধারণ মানুষের অভাব–অভিযোগ নথিবদ্ধ করেন। অভিযোগ মূলত দু’টি।
এক, জল খুব ধীরে ধীরে কল থেকে পড়ছে। দুই, বহু জায়গায় পাইপলাইন বসলেও জল সরবরাহ এখনও পর্যন্ত চালু হয়নি। তা ছাড়া, বেশ কিছু ক্ষেত্রে পানীয় জলের অপচয় ও পাইপ কেটে নিয়ে নিয়মবহির্ভূত ভাবে জল ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে বেশ কিছু ক্ষেত্রে অভিযোগও দায়ের করেছেন প্রশাসনের আধিকারিকরা।
হুগলি জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, বিভিন্ন এলাকায় পাইপলাইনের সংযোগ, পানীয় জলের সরবরাহের পরিমাণ ও গতি সংক্রান্ত বিষয়গুলোর উপর সমীক্ষা–রিপোর্ট নিয়ে রবিবার আলোচনা হয়। পানীয় জলের পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে যাবতীয় প্রতিবন্ধকতা দূর করে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজে গতি আনার নিদান দিয়েছেন জেলাশাসক।
হুগলি জেলা পরিষদের সভাধিপতি রঞ্জন ধাড়া বলেন, ‘রাজ্যের প্রতিটি বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার উপর মুখ্যমন্ত্রী গুরুত্ব দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশের প্রেক্ষিতে জেলাশাসক রবিবার একটি বৈঠক করেন। আমরা ইতিমধ্যেই জেলার ১৮টি ব্লকে ১৮৩টি নতুন জলের ট্যাঙ্ক তৈরি করেছি। সেই সঙ্গে ১৬৮টি জলের ট্যাঙ্কের সংস্কার করা হয়েছে। আগামী বছর যাতে সবার বাড়ি বাড়ি ঠিকঠাক ভাবে জল পৌঁছে দেওয়া যায়, আমরা সেই চেষ্টা করছি।’