আলু নিয়ে টানা-পোড়েন অব্যাহত। ভিন রাজ্যে আলু রফতানি বন্ধ রাখার বিষয়ে কৃষি বিপণন মন্ত্রী বেচারাম মান্নার সঙ্গে বৈঠকে মিলল না কোনও রফাসূত্র। সোমবার রাত থেকে কর্মবিরতিতে নেমেছেন আলু ব্যবসায়ীরা। মঙ্গলবার রাজ্যের কোনও স্টোরে ব্যবসায়ীরা আলু বের করবেন না, বাছাই করে বিক্রির ব্যবস্থাও করবেন না। যার কারণে রাজ্যের বাজারগুলিতে আলুর ঘাটতি হতে পারে। তাতে আলুর দাম হঠাৎ আরও বেড়ে যেতে পারে। এদিকে, সোমবারও মুখ্যমন্ত্রী ভিন রাজ্যে আলু পাঠানো বন্ধ রাখার পক্ষে সওয়াল করেছেন। বিধানসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন,'আলুর দাম বাড়লে আমরা কিনে সুফল বাংলায় সাপ্লাই করি। কিন্তু কিছু লোক বাইরে রফতানি করছে নিজেদের ব্যবসার জন্য। বাংলার চাহিদার ৭৫% পেঁয়াজ এখানে উৎপাদন হয়। সেখান থেকেও লোকে বাইরে পাঠাচ্ছে। ফলে দাম বাড়ছে। মধ্যবিত্তের সমস্যা বাড়ছে। ব্যাগ ভরে বাজার করে ফিরতে নাভিশ্বাস উঠছে। আগে বাংলা পাবে, তার পর বাকিরা।'
এদিকে, এমনিতেই কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরেই কয়েকটি বাজারে আলুর দাম কেজিতে ১-২ টাকা বেড়ে গিয়েছে। কর্মবিরতি শুরু হলে আলুর দাম আরও বাড়তে পারে। ডিসেম্বর মাস পড়ে গেলেও বাজারে নতুন আলুর দেখা নেই। বাঁকুড়ার জলদি আলুও এখনও ওঠেনি। কারণ ধানচাষে দেরি হওয়াতে জলদি আলুর চাষও দেরিতে হয়েছে। ফলে যা পরিস্থিতি তাতে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের আগে জলদি আলু বাজারজাত করা যাবে না বলেই মনে হচ্ছে। এদিকে, কর্মবিরতির জেরে যদি হিমঘরগুলিতে আলু বের না হয়, বাজারজাত না হয়, তাতে পুরনো আলুর দামই কেজিতে ৪০ টাকা ছাড়াতে পারে।
এদিকে, আলু বাইরে না গেলে বাংলার বাজারে আলুর দাম বাড়বে না, মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন ব্যবসায়ারী। তারা বরং উল্টোটা বলছেন। আলু বাইরে গেলেও বাংলার বাজারে আলুর দাম বাড়বে না বলেই দাবি তাঁদের। ব্যবসায়ীদের দাবি, হিমঘরগুলো থেকে যে আলু বের হয় তার মধ্যে সবচেয়ে ভাল আলুটা কলকাতা-সহ রাজ্যের অন্য বাজারগুলিতে পাঠানো হয়। তারপরে যে আলুটা পড়ে থাকে, সেগুলি অন্য রাজ্যে রফতানি করা হয়। এছাড়াও, রাজ্যের হিমঘরগুলিতে এখনও পর্যন্ত যা আলু আছে, তাতে ডিসেম্বর মাসটা হেসেখেলে চলে যাবে। কোনও সমস্যা হবে না। দামও বাড়বে না। প্রতগিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক লালু মুখোপাধ্যায় বলেন, 'হিমঘরগুলিতে এখনও প্রায় সাড়ে ৬ লক্ষ মেট্রিক টন আলু রয়েছে। আমরা আড়াই মেট্রিক টন আলু রফতানির কথা বলেছি রাজ্য সরকারকে। এই আলুটা সেকেন্ড গ্রেডের। ৪ লক্ষ আলু রাজ্যের জন্য তাতেও থাকবে। যাতে ডিসেম্বর পর্যন্ত চলে যাবে।'
বাংলায় আলুর দাম বাড়া নিয়ে লালুবাবু বলেন,'আলু অন্য রাজ্যে গেলেও ভাল। লোকাল বাজারে যে আলু যায় তার সঙ্গে বাইরে যাওয়া আলুর কোনও সম্পর্ক নেই। অন্য রাজ্যে যে আলু যায় সেটা গুণগত মানে কলকাতার বাজারের মতো নয়। অন্য রাজ্যে আলু না যাওয়ার কারণে ব্যবসায়ীরা আলু বের করছেন না। সাপ্লাই কম হচ্ছে। তাতে খুচরো বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার কথা বলা হচ্ছে সেই কারণে। তবে, পাইকারি বাজারে বাড়েনি। অনেক খুচরো ব্যবসায়ী কর্মবিরতির কথা ভেবে আলু স্টক করে বেশি দামে বেচতে পারেন। মুখ্যমন্ত্রী কীভাবে বলছেন সেটা বলতে পারব না। ৪ লক্ষ মেট্রিক টন আলু রাজ্যের জন্য যথেষ্ট। ডিসেম্বর পর্যন্ত চলে যাবে। জানুয়ারিতে নতুন আলু চলে আসবে।'