আবাসে যোগ্যদের নাম বাতিল সিপিএম পঞ্চায়েতে তালা, বিক্ষোভ
বর্তমান | ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪
সংবাদদাতা, মানবাজার: আবাসের তালিকা থেকে যোগ্যদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। এমনই অভিযোগ তুলে পঞ্চায়েত অফিসে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ দেখালেন বাসিন্দারা। সোমবার সকালে মানবাজার-১ ব্লকের সিপিএম পরিচালিত ধানাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতে এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়ায়। বিষয়টিতে লেগেছে রাজনৈতিক রং। বেছে বেছে তৃণমূল কর্মী সমর্থকদের পরিবারের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। তাই বিক্ষোভে শামিল হয় স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। এই ঘটনায় উত্তেজনা ছড়ায়। বিক্ষোভের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন মানবাজার-১ বিডিও দেবাশিস ধর। মানবাজার থানার পুলিসও পৌঁছয়। পুলিস ও প্রশাসনের আধিকারিকরা বিষয়টি দেখার আশ্বাস দিলে বিক্ষোভ ওঠে। বিক্ষোভকারীরা পঞ্চায়েতের গেটের তালা খুলে দেন। এছাড়া, এদিন বিজেপি পরিচালিত বারমেশ্যা রামনগর গ্রাম পঞ্চায়েতও আবাস যোজনার তালিকা নিয়ে বিক্ষোভ দেখান মহিলারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরুলিয়ার মানবাজার-১ ব্লকের ধানাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতকে কার্যত সিপিএমের দুর্গ বলা হয়। বরাবরই এই পঞ্চায়েত সিপিএমের দখলে রয়েছে। রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতার আসার পর একবার মাত্র নির্বাচনে ওই পঞ্চায়েত তৃণমূলের দখলে আসে। তারপর আবার সিপিএম দখলে নেয়। ওই পঞ্চায়েতেই আবাস যোজনার তালিকা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। অভিযোগ, আবাসের তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও সার্ভের পর অনেক গরিব মানুষের নাম বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। পঞ্চায়েত থেকেই পরিকল্পিতভাবে এই কাজ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। তাই এদিন অফিস খুলতেই পঞ্চায়েতে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়।
পঞ্চায়েতের দারাশোল গ্রামের বাসিন্দা গীতা সিং সর্দার বলেন, আমার আবাস যোজনার তালিকা নাম ছিল। কিন্তু, সার্ভের পর পঞ্চায়েত থেকে নাম কেটে দেওয়া হয়েছে। তাই পঞ্চায়েত অফিসে তালা ঝোলানো হয়। নিয়াসা গ্রামের নিয়তি বাউরি বলেন, যাঁদের পাকা বাড়ি আছে, তাঁদের নাম তালিকায় রয়েছে। কিন্তু, মাটির বাড়ি থাকা সত্ত্বেও আমার নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। অনেকবার বাড়িতে গিয়ে ছবি তোলা হয়েছিল, তারপরেও তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।
শেফালি বাউরির অভিযোগ, তাঁর স্বামীর নাম আবাসের তালিকায় ছিল। মাটির বাড়িতে তাঁরা কোনওরকম বসবাস করেন। কিন্তু, সার্ভের পর স্বামীর নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। তারই প্রতিবাদ এদিন জানানো হয়। এদিন বিক্ষোভে শামিল হন তৃণমূল কর্মীরাও। তাঁদের অভিযোগ, যোগ্য উপভোক্তা হওয়া সত্ত্বেও অনেক তৃণমূল সমর্থকের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। পঞ্চায়েত থেকে পরিকল্পিতভাবে এই কাজ করা হয়েছে। মানবাজার পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন কর্মাধ্যক্ষ তথা তৃণমূল নেতা দিলীপকুমার পরামানিক বলেন, যাঁরা মাটির কুঁড়েঘরে কোনওরকমে বসবাস করেছে, তাঁদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। সিপিএমের পঞ্চায়েত এজন্য তৃণমূল সমর্থকদের নাম কেটে দেওয়া হয়েছে। তার প্রতিবাদেই সাধারণ মানুষ পঞ্চায়েতে তালা ঝুলিয়েছিল। তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীরাও সাধারণ মানুষের জন্য বিক্ষোভে শামিল হন। ধানাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সুজাতা মণ্ডল বলেন, পঞ্চায়েত থেকে কারও নাম বাদ দেওয়া হয়নি। ব্লক প্রশাসন থেকে গ্রামে গিয়ে সার্ভে করা হয়েছে। ওরা যে অভিযোগ করছে, তা ভিত্তিহীন। মানবাজার-১ বিডিও দেবাশিস ধর বলেন, বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। যে অভিযোগগুলি আসবে, তা অত্যন্ত স্বচ্ছতা ও মানবিকতার সঙ্গে বিচার করে দেখা হবে।