কোয়েলের নেশায় সর্বস্বান্ত মানুষ ডোমকলজুড়ে রমরমিয়ে চলছে অবৈধ জুয়া
বর্তমান | ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪
সংবাদদাতা, ডোমকল: টেবিলের ওপরে সারি সারি সাজানো লটারির টিকিট। পাশেই সাদা খাতায় ছক করা ঘর। খাতার নীচে চাপা দেওয়া বেশ কিছু ছোট ছোট কাগজের টোকেন। দেখে মনে হবে লটারির টিকিট বিক্রি করছে ব্যবসায়ী। কিন্তু আসল খেলা চলছে তার পেছনে। লটারির টিকিটের আড়ালে পিছনে চলছে অবৈধ জুয়ার কারবার। পোশাকি নাম, ‘কোয়েল’। কখনও লুকিয়ে চুরিয়ে, কখনও লটারির আড়ালে, কখনও আমবাগানে, কোথাও কোথাও আবার ভরা বাজারে চলছে টাকা ওড়ানোর ওই খেলা। ভাগ্য পরিবর্তনের হাতছানি ও বিনা পরিশ্রমে টাকা উপার্জনের নেশায় সর্বস্ব খোয়াচ্ছেন বাড়ির পুরুষ সদস্যরা। ডোমকল মহকুমা জুড়েই চলছে অবৈধ এই জুয়ার রমরমা কারবার। অভিযোগ উঠছে খোদ পুলিস প্রশাসনের মদতেই চলছে এই কারবার।
কী এই, ‘কোয়েল’? কীভাবেই বা চলছে এই জুয়া? পরিচয় গোপন রেখে বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, বৈধ লটারিকে কেন্দ্র করেই এই জুয়া চলে। এক ব্যবসায়ী খোলসা করলেন পুরো প্রক্রিয়াটি। তার কথায়, লটারির টিকিটে প্রথম পুরস্কারের যে নম্বর উঠবে সেই নম্বরকে কেন্দ্র করেই চলে জুয়া। অর্থাৎ লটারির ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার আগেই। লটারির প্রথম পুরস্কারে যে সংখ্যা উঠবে তার শেষ সংখ্যা কত হবে? সেই সংখ্যা অনুমান করেই চলে বাজি ধরা। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে ওই সংখ্যার চিরকুট কিনতে হয়। পরে ফল প্রকাশিত হওয়ার পর সংখ্যা মিলে গেলেই মেলে প্রায় দশগুন টাকা। আর সংখ্যা না মিললে খালি হাতেই ঘুরতে হয় জুয়াড়িদের। যারা এই জুয়া খেলায়, তারাও মোটা অঙ্কের কমিশন পায়। বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, জুয়াড়িরা একটি দু’টি চিরকুট কিনেই ক্ষান্ত হচ্ছে না। দ্রুত বড়লোক হওয়ার নেশায় একসঙ্গে বিভিন্ন সংখ্যার প্রচুর চিরকুট কিনছে। আর নম্বর না মিললে সব টাকা জলে যাচ্ছে।
বাড়ির পুরুষ সদস্যরা এমনই সব দোকানে প্রতিদিন ভিড় জমাচ্ছেন। দিন দিন তা নেশায় পরিণত হচ্ছে। নেশার ফাঁদে পড়ে খোয়াচ্ছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। তা নিয়ে বাড়িতে অশান্তিও চলছে। গৃহিণীদের গচ্ছিত উপার্জনেও হাত পড়ছে। বাড়ির সদস্যদের ওপরে অত্যাচার বাড়ছে। অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে মহিলারাই জুয়ার ঠেক ভাঙতে এগিয়ে আসছেন। গত শনিবার সকালেও একই অভিযোগ তুলে জলঙ্গির বাগমারায় রাস্তায় বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন মহিলারা। মাস দেড়েক আগে রানিনগরের ঝাউবাড়িয়ায় কোয়েলের ঠেকে ভাঙচুর চালিয়েছিলেন মহিলারাই। তাঁদের একাংশের অভিযোগ, পুলিস প্রশাসনের মদতেই রমরমিয়ে চলছে এই কারবার। তাঁদের দাবি, এই জুয়া দ্রুত বন্ধ করুক প্রশাসন।
ডোমকলের এক বাসিন্দা বলেন, বহু এলাকায় চলছে এই জুয়ার কারবার। অথচ প্রশাসন কিছুই ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বছর খানেক আগেই শীতলনগরের একজন মারা যায় এই কোয়েলের ফাঁদে পড়ে।
ডোমকলের এসডিপিও শুভম বাজাজ বলেন, কোথাও জুয়ার খবর এলেই সঙ্গে সঙ্গে সেখানে হানা দিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অনেককে গ্রেপ্তারও করা হচ্ছে। এলাকায় কোনওভাবেই জুয়ার আসর বসতে দেওয়া হবে না।