• ৩৬ বছর পর জেল থেকে মুক্ত শতায়ু
    বর্তমান | ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪
  • সংবাদদাতা, মানিকচক: ৩৬ বছর পর স্বামী জেল থেকে ফিরছেন, কেমন লাগছে? শতায়ু বন্দির ৯০ ছুঁইছুঁই স্ত্রী আরতী মণ্ডলকে প্রশ্ন করলেও উত্তর এল না। পরিবারের লোকরা বললেন, কানে এখন খুব কম শোনেন বৃদ্ধা। একটু জোরে একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করায় মুখে ফুটে উঠল হাসি। আরতি বললেন, খুব ভালো লাগছে। এমন দিন দেখতে পাব ভাবিনি। কথা বলতে বলতেই ঘর থেকে নিয়ে এলেন স্বামীর ছবি। চোখ মুছতে মুছতে বললেন, আমার স্বামী খুন করেনি। তাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছিল। এরপরই অঝোরে কান্না। ঝরে পড়ল অনেক যন্ত্রণা!

    মালদহের মানিকচকের প্রত্যন্ত গ্রাম পশ্চিম নারায়ণপুর কলোনির শতায়ু রসিক মণ্ডল খুনের অভিযোগে জেল খেটেছেন ৩৬ বছর। বয়সজনিত কারণে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে গত ২৯ নভেম্বর ছাড়া পেয়েছেন তিনি। এরপর তাঁকে দিতে হবে না কোনও হাজিরা। ফিরতে হবে না জেলে।

    সোমবার দুপুরে জেলবন্দি রসিকবাবুর বাড়ি গিয়ে দেখা গেল খুশির বন্যা। নথিপত্রের কাজ শেষে কখন ফিরবেন তিনি, বারবার খোঁজ নিতে আসছেন গ্রামবাসীরাও। মেজো ছেলে উত্তমের বাড়িতেই থাকছিলেন আরতী। রসিকবাবুর চার ছেলে ও আট নাতি, নাতনি। বড় ছেলের মৃত্যুর পর বাকিরা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছেন রসিকবাবুকে বাড়ি ফিরিয়ে আনতে। বারবার হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েও জামিন মেলেনি বলে দাবি তাঁদের। ‘নতুন’ জীবনে ফেরা প্রসঙ্গে রসিকের মন্তব্য, নির্দোষ ছিলাম। জানতাম একদিন ছাড়া পাব। তবে জীবনের শেষ বয়সে মুক্তি পেয়ে যতদিন বাঁচব, পরিবারের পাশে থাকতে চাই।

    ৩৬ বছর আগে এক খুনের ঘটনায় নাম জড়ায় রসিকবাবুর। রাতের অন্ধকারে বাড়িতে ঢুকে রসিকবাবুর ভাই সুরেশকে গুলি করে হত্যা করা হয়। সেই সময় জমি নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে বিবাদ চলছিল। মৃতের পরিবার দাবি করেছিল দাদা রসিকই খুন করেছেন। মানিকচক থানায় রসিকসহ কয়েকজনের নামে খুনের অভিযোগ দায়ের হয়। রসিক ও মথুরাপুরের বাসিন্দা জীতেনকে গ্রেপ্তার করে মানিকচক থানার পুলিস। সেইসময় থেকে জেলবন্দি দশা শুরু রসিকবাবুর। মাঝে কয়েকবার জামিন পেলেও শেষে স্থায়ী ঠিকানা হয়ে দাঁড়ায় মালদহ জেলা সংশোধনাগার। কিন্তু হাল ছাড়েনি রসিকবাবুর ছেলে ও তাঁদের সন্তানরা। আইনের দরজায় বারবার ঘুরে অবশেষে ফল পেয়েছেন তাঁরা।
  • Link to this news (বর্তমান)