পাকা বাড়ি, গাড়ি সত্ত্বেও আবাসে নাম আবেদনকারীদের প্রকাশ্যে ধমক বিডিও’র
বর্তমান | ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: কারও পাকাবাড়ি। কারও আবার বাড়ির উঠোনে দাঁড় করানো গাড়ি। কিন্তু তাঁদেরই নাম উঠেছে ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পের তালিকায়। এঁদের মধ্যে নাম রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের এক পঞ্চায়েত সদস্যেরও। অভিযোগ খতিয়ে দেখতে সোমবার সন্ধ্যায় পাহাড়পুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বালাপাড়ায় হানা দেন খোদ জলপাইগুড়ি সদরের বিডিও মিহির কর্মকার। পরিদর্শনের পর কার্যত চক্ষু চড়কগাছ তাঁর। প্রকাশ্যে কয়েকজন আবেদনকারীকে ধমকও দেন তিনি।
নিজের পাকাবাড়ি থাকা সত্ত্বেও ভাঙা ঘর দেখিয়ে বিডিও’কে বিভ্রান্ত করার অভিযোগে চিন্ময় রায় নামে এক আবেদনকারীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন ওই প্রশাসনিক কর্তা। নিজের ভুল স্বীকার করে অবশেষে বিডিও’র কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন ওই ব্যক্তি। এদিকে, বিডিও’র পরিদর্শনের পরই প্রশাসনের কাছে আবাস তালিকা থেকে নিজের নাম বাদ দেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন বালাপাড়ার তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য বাবলু বসাক। অভিযোগ, পাকা দেওয়ালের ঘর এবং গাড়ি থাকা সত্ত্বেও আবাসে নাম উঠেছে তাঁর। এনিয়ে ওই পঞ্চায়েত সদস্যের দাবি, গাড়িটি অনেক আগে কেনা। আমি নতুন পঞ্চায়েত সদস্য। আবাসে আমার নাম কাটানোর জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছি।
পরিদর্শন শেষে বিডিও বলেন, আবাসের তালিকায় নাম থাকা বেশকিছু আবেদনকারীর বিরুদ্ধে এদিন লিখিত অভিযোগ জমা পড়ে। তারই ভিত্তিতে পাহাড়পুর পঞ্চায়েতের বালাপাড়ায় ১৪ জনের বাড়িতে আচমকা পরিদর্শন চালানো হয়। পাকাবাড়ি কিংবা গাড়ি থাকা সত্ত্বেও যাঁদের নাম আবাসের তালিকায় রয়েছে, সেগুলি বাতিল হবে কি না, প্রশ্নের উত্তরে বিডিও বলেন, সরেজমিনে পরিদর্শন করে আবেদনকারী এবং আশপাশের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে, ছবি তুলে নিয়েছি। আইন মেনে পদক্ষেপ করা হবে।
বিডিও’র পরিদর্শনের সময় পঞ্চায়েত সদস্য বাবলু বসাক বাড়ি না থাকলেও দেখা যায়, তাঁর বাড়ির উঠোনে গাড়ি দাঁড় করানো। বিডিও জিজ্ঞেস করতেই পঞ্চায়েত সদস্যের স্ত্রী রেণুকা বসাক বলেন, গাড়িটি স্বামী অনেক আগে কিনেছিলেন। কিন্তু সেটি আমার নামে রয়েছে। অভিযোগ, আবাসের তালিকায় পঞ্চায়েত সদস্যের পরিবারের আরও বেশ কয়েকজনের নাম আছে। তাঁদের বাড়িগুলিও খতিয়ে দেখেন। দেখা যায়, বেশিরভাগ বাড়ির দেওয়াল পাকা। আবাসের তালিকায় ‘যোগ্য’ হিসেবে নাম থাকা পরিতোষ বসাক, রাজেশ রায়ের বাড়িতে গিয়েও বিডিও দেখেন, ঘরের দেওয়াল পাকা। শেষে তিনি যান সুবীর বসাক ও হেমন্ত বসাকের বাড়িতে। দেখা যায়, একটি বাড়ি দোতলা হচ্ছে। হেমন্তবাবু অবশ্য দাবি করেন, নির্মীয়মাণ ওই দোতলা বাড়িটি তাঁর ছোট ছেলের। সুবীর বসাক যে বাড়িতে থাকেন, সেটিও পাকা। সুবীরের দাবি, এটি তাঁর বাড়ি নয়, তাঁর বাবার। পাহাড়পুর পঞ্চায়েতের বালাপাড়ায় পরিদর্শনে বিডিও। - নিজস্ব চিত্র।