বাড়িতে সোনা রাখলেই মিলছে কমিশন, সীমান্তের গ্রামে ‘হল্ট স্টেশন’ নতুন কৌশল পাচারকারীদের
বর্তমান | ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, বিধাননগর: সীমান্তের চোরাপথে বাংলাদেশ থেকে ভারতে সোনা পাচার নতুন নয়। এই কারবারে সোনার বিস্কুটের সঙ্গে এখন নতুন সংযোজন সোনার ইট! এতদিন সোনা পাচার করে দিতে পারলে কমিশন মিলত। এখন সীমান্ত ঘেঁষা গ্রামে বাড়িতে সোনা রাখলেই মিলছে মাসোহারা। চোরাকারবারিরা পাচারের জন্য এমনই ‘হল্ট স্টেশনে’র কৌশল নিয়েছে। অবৈধ সোনা বাংলাদেশ থেকে সীমান্ত পেরবার পর গ্রামের কোনও বাড়িতে কিছুদিন লুকনো থাকছে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সেই সোনা হাতবদল হয়ে পৌঁছে যাচ্ছে নির্দিষ্ট আস্তানায়। তবে যে কৌশলেই হোক না কেন, সোনা পাচার রুখতে কড়া অভিযান শুরু করেছে বিএসএফ। সাফল্যও মিলছে। গত দু’-সপ্তাহে দক্ষিণবঙ্গের সীমান্ত এলাকা থেকে প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকার সোনা উদ্ধার হয়েছে।
জানা গিয়েছে, দুবাই থেকে সস্তায় সোনার বিস্কুট আসছে বাংলাদেশে। কর ফাঁকি দিয়ে তা ভারতের বাজারে চড়া দামে বিক্রির জন্য সীমান্ত দিয়ে পাচার করা হয়। আগে ভারত থেকে বাংলাদেশে পাচার হতো গোরু। বিনিময়ে বাংলাদেশ থেকে আসত সোনার বিস্কুট। বর্তমানে গোরু পাচার কমে এসেছে। কিন্তু, সোনা পাচার দিন দিন বাড়ছে। বেশ কয়েকমাস আগে উত্তর ২৪ পরগনা থেকে একজনকে গ্রেপ্তার করেছিল বিএসএফ। তাকে জেরা করে জানা গিয়েছিল, সে তার বাড়িতে সোনা রাখতে দিয়েছিল। তার জন্য পেয়েছিল নির্দিষ্ট কমিশনও। পরবর্তী তদন্তে গোয়েন্দারা জানতে পারেন, চোরাকারবারিরা সীমান্ত টপকানো মাত্রই তা কলকাতার বাজারে নিয়ে চলে আসছে না। বেশ কয়েক ঘণ্টা সীমান্তের গ্রামেই ‘হল্ট স্টেশন’-এ সোনা লুকিয়ে রাখা হচ্ছে।
সোমবার উত্তর ২৪ পরগনার সীমান্ত থেকে সোনা পাচারের অভিযোগে একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারকে গ্রেপ্তার করেছে বিএসএফ। তার কাছ থেকে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকার সোনার বিস্কুট উদ্ধার হয়েছে। তাকে জেরা করেও বিএসএফ জানতে পেরেছে, সোনার বিস্কুট বাড়িতে রাখার জন্য সে রাজি হয়েছিল। মাত্র ১-২ ঘণ্টা বাড়িতে সোনা লুকিয়ে রাখতে পারলেই ৫০০-১০০০ টাকা কমিশন পাওয়া যায়। সেই কমিশনের জন্যই সে সোনা রাখতে রাজি হয়েছিল। বিএসএফ জানিয়েছে, বাড়িতে চোরাই সোনা রাখা মানেও পাচারের সঙ্গে যুক্ত থাকা। তাই সীমান্তের গ্রামের বাসিন্দাদেরও বারবার সচেতন করা হচ্ছে। কোনও সোনা পাচারের ঘটনা তাঁরা জানতে পারলে বিএসএফের সীমা সাথী হেল্পলাইন (১৪৪১৯) বা হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে (৯৯০৩৪৭২২২৭) তথ্য শেয়ার করার আবেদন রাখা হচ্ছে। সঠিক তথ্য দিলে পরিচয় গোপন রেখে তাঁকে আর্থিক পুরস্কারও দেওয়া হবে বলে প্রচার চালাচ্ছে বিএসএফ।