ওই স্যালাইনের মান নিয়ে নিকট অতীতে একাধিক বার প্রশ্ন তুলেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের সরকারি হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের একাংশ। চলতি বছর যখন বিক্ষিপ্ত ভাবে রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে সিজ়ারের পরে একসঙ্গে একাধিক প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটে, তখনও চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশ সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন সেই স্যালাইনের মান নিয়ে। কিন্তু ছাড়পত্র বহাল ছিল সেই স্যালাইনের।
প্রশ্ন উঠেছে, কর্নাটক সরকার যদি সন্দেহের ভিত্তিতে এই কড়া শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করতে পারে তা হলে এত জন প্রসূতির মৃত্যুর পরে এবং এত চিকিৎসক স্যালাইন নিয়ে প্রশ্ন তোলার পরে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কেন কোনও পদক্ষেপ করল না? কর্নাটকের ঘটনার পরেও কি তারা ওই সংস্থার স্যালাইন ব্যবহার করা চালিয়ে যাবে? রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা স্বপন সোরেন বলেন, “আমাকে বিষয়টা ভাল ভাবে জানতে হবে।”
‘কর্নাটক স্টেট মেডিক্যাল সাপ্লাইজ় কর্পোরেশন’-এর সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতে ওই রাজ্যের সরকারি স্বাস্থ্য ক্ষেত্রেও প্রসূতিদের জন্য প্রয়োজনীয় স্যালাইন সরবরাহ করত পশ্চিমবঙ্গের ইসলামপুর এলাকার সংস্থা ‘পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যাল’। গত ৯ নভেম্বর কর্নাটকের বেলারি জেলা হাসপাতালে ১৪ জন প্রসূতির সিজ়ার হওয়ার পরে তাঁদের মধ্যে সাত জনকে ওই সংস্থার স্যালাইন দেওয়া হয়েছিল। তার পরেই তাঁরা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে অভিযোগ। তাঁদের মধ্যে চার প্রসূতির মৃত্যু হয়।
কর্নাটকের ‘রাজীব গান্ধী ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সেস’-এর তরফে বিষয়টি নিয়ে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত হয় এবং জানানো হয়, চিকিৎসক ও হাসপাতালের তরফে কোথাও কোনও ত্রুটি ছিল না। যে স্যালাইন ব্যবহার করা হয়েছে, সেটিই প্রসূতিদের মৃত্যুর জন্য দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে। গত শনিবার স্বাস্থ্যকর্তাদের জরুরি বৈঠকের পরে কর্নাটক সরকার পশ্চিমবঙ্গের ওই সংস্থাকে কালো তালিকাভুক্ত করার কথা ও আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। শুধু তা-ই নয়, ওই স্যালাইনকে ছাড়পত্র দেওয়ার জন্য কর্নাটকের ড্রাগ কন্ট্রোলারকেও সাসপেন্ড করা হয়েছে। স্যালাইনের নমুনা পরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছে। সেই সঙ্গে কর্নাটক স্বাস্থ্য দফতর আলাদা ভাবে তদন্ত শুরু করেছে।
প্রসঙ্গত, চলতি বছর একাধিক বার কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, ডায়মন্ড হারবার, মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল-সহ একাধিক জায়গায় পর পর সিজ়ারের পরে একাধিক প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটায় স্যালাইনের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ। সেই সময়ে স্যালাইনের নমুনা কেন্দ্রীয় ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করেও খারাপ কিছু পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছিল স্বাস্থ্য দফতর।
যে সংস্থার স্যালাইন নিয়ে এত কিছু সেই ‘পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যাল’-এর তরফে তাদের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর মুকুল ঘোষ বলেন, “কর্নাটকে একটা সমস্যা হয়েছে। তবে ওরা এখনও লিখিত ভাবে আমাদের কিছু জানায়নি। আমাদের স্যালাইনে কোনও গোলমাল নেই। স্যালাইনের জন্য কখনও মানুষ মারা যায় না।” তাঁর আরও বক্তব্য, “ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষার জন্য গিয়েছে। আমরা ১০০ শতাংশ নিশ্চিত যে, খারাপ কিছু পাওয়া যাবে না। এর আগেও এক বার কর্নাটক স্যালাইনের নিম্নমানের অভিযোগ তুলে নমুনা পরীক্ষা করিয়েছিল। তখনও আমরা পাশ করে গিয়েছিলাম।”