নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: অনাবাসী ভারতীয় কোটায় জাল নথি দিয়ে মেডিক্যালে ভর্তির অভিযোগে দিনভর হলদিয়ায় লক্ষ্মণ শেঠের বাড়ি ও মেডিক্যাল কলেজে অভিযান চালাল ইডি। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ ইডি অফিসাররা সিআরপিএফের নিরাপত্তায় দু’টি টিমে ভাগ হয়ে হলদিয়ার গান্ধীনগরে লক্ষ্মণ শেঠের বাড়ি এবং কলেজে পৌঁছে যান। তমলুকের প্রাক্তন সংসদের বাড়ি থেকে তাঁর ব্যক্তিগত দেহরক্ষীদের বের করে গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেসময় লক্ষ্মণবাবু, তাঁর সংস্থার সম্পাদক আশিস লাহিড়ি বাড়িতেই ছিলেন। বাড়ির চারপাশ ঘিরে ফেলে বাহিনী। বাইরে থেকে কাউকে বাড়ির ভিতর যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি। ঘরের ভিতর তদন্তকারী অফিসাররা দু’জনের সঙ্গে কথা বলেন।
ইডি অফিসারদের অন্য টিম আধাসেনার নিরাপত্তায় পৌঁছে যায় লক্ষ্মণ শেঠের মেডিক্যাল কলেজে। সেখানেও মূল গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। ভিতরে ইডি অফিসাররা মেডিক্যাল কলেজের নথিপত্র খতিয়ে দেখেন। বিভিন্ন ফ্যাকাল্টির প্রধানদের সঙ্গেও কথা বলেন। সকাল গড়িয়ে দুপুর এবং বিকেল হয়ে গেলেও ইডি অফিসারদের জেরাপর্ব চলতেই থাকে। মেডিক্যাল কলেজ ও বাড়িতে ইডির হানা ঘিরে শিল্পশহর তো বটেই, গোটা জেলায় হইচই পড়ে যায়। লক্ষ্মণ শেঠ এখন কংগ্রেসের রাজ্য সহ সভাপতি। স্বাভাবিকভাবে রাজনৈতিক মহলেও আলোড়ন পড়ে।
২০১১ সালে হলদিয়ায় এই মেডিক্যাল কলেজ চালু হয়। তারপর বিভিন্ন সময়ে এমসিআই অনুমোদন নিয়ে ঝক্কির মধ্যে পড়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ। নানা ইস্যুতে বিতর্ক তৈরি হয়। ২০১২ সাল, ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে মোট তিনবার ওই মেডিক্যাল কলেজে ছাত্রভর্তি বন্ধ করে দিয়েছিল এমসিআই। এই মুহূর্তে ১৫০আসনে এমবিবিএস কোর্স পড়ানো হয়। এছাড়াও ৫০টি আসনের এমডি এবং এমএস কোর্স চলছে। পোস্ট গ্র্যাজুয়েটে আসন সংখ্যা বাড়নোর জন্য ন্যাশনাল মেডিক্যাল কাউন্সিলে আবেদন জানিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। সেজন্য এনএমসি ভিজিটও করছে। তারমধ্যেই ইডি হানার ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
এনআরআই(নন ইন্ডিয়ান রেসিডেন্ট) কোটায় ভিন রাষ্ট্রের ছেলেমেয়েরা ভর্তি হন। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কাউন্সিল থেকে এজন্য কোটা বেঁধে দেওয়া আছে। অভিযোগ, ওই কোটায় নথি জালিয়াতি করে এদেশের পড়ুয়াদের ভর্তি নেওয়া হয়েছে। সেই অভিযোগে রাজ্যে একযোগে প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজে ইডি অভিযান শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে হলদিয়া মেডিক্যাল কলেজ ক্যাম্পাসে ঘটা করে ইন্টার মেডিক্যাল কলেজ ফুটবল টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার কথা ছিল। সোমবার থেকেই ২০টি সরকারি ও বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ থেকে টিম এসে পৌঁছে গিয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেলজিয়ামের প্রাক্তন ফুটবলার ফিলিপ ইন্ডি রাইডার এবং লক্ষ্মণবাবুর উপস্থিত থাকার কথা ছিল। কিন্তু, ইডির হানায় লক্ষ্মণ শেঠ অনুষ্ঠানে যেতে পারেননি। সাদামাটাভাবেই ওই টুর্নামেন্ট শুরু হয়।
এদিন সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ সাত-আটটি গাড়িতে ইডি অফিসাররা লক্ষ্মণ শেঠের বাড়ি থেকে অন্যত্র রওনা দেন। এদিনের ঘটনা নিয়ে গোটা শিল্পাঞ্চল সরগরম ছিল।