নামী দলের গোলরক্ষক হওয়ার স্বপ্ন বুকে নিয়ে লড়াই চালাচ্ছেন রামকৃষ্ণ
বর্তমান | ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪
সংবাদদাতা, নবদ্বীপ: দু’ চোখে স্বপ্ন কলকাতা ময়দানের দুই প্রধানের গোলরক্ষক হওয়া। সেই স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে অদম্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন নবদ্বীপের রামকৃষ্ণ দেবনাথ। বাবা অসিত দেবনাথ তাঁত শ্রমিক। তিনি জন্ম থেকেই একটি চোখে দেখতে পান না। বয়সের ভারে ও অসুস্থতার কারণে ঠিকমতো কাজও করতে পারেন না। রামকৃষ্ণ কলকাতার মাঠে খেললেও তাতে যা অর্থ মেলে তাতে সংসার চালানো দায়। তাই অধিকাংশ দিন খেপ খেলেই টাকা রোজগার করতে হয় রামকৃষ্ণকে। তবুও নিয়মিত কঠোর অনুশীলন করে চলেছেন। নবদ্বীপ মাজদিয়া-পানশিলা পঞ্চায়েতের খেজুর বাগান এলাকায় রামকৃষ্ণের বাড়ি। মা মণি দেবনাথ গৃহবধূ। ভাই কলেজ পড়ুয়া। মাথাগোঁজার ঠাঁই বলতে একটি মাত্র টিনের চালাঘর। সেই ঘরেই বাবা-মা ভাইকে নিয়ে থাকেন রামকৃষ্ণ।
বছর ছাব্বিশের এই যুবক কলকাতার প্রিমিয়ার লিগে সার্দান সমিতির হয়ে খেলছেন। এ বছরই তিনবার ম্যান অব দ্য ম্যাচ পুরস্কারও পেয়েছেন। এবছর নবদ্বীপ সকার কাপ টুর্নামেন্টে সেবক সমিতির হয়ে খেলছেন। কিন্তু কলকাতার বড় ক্লাবে খেলে তেমন পারিশ্রমিক জোটেনি। আর্থিক অনটনের কারণে বেশিদূর লেখাপড়া করতে পারেনি। স্থানীয় স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করেছেন। ভেবেছিলেন ভালো ফুটবলার হয়ে পরিবারের অভাব অনটন দূর করবেন। সেই লক্ষ্যে ১২ বছর ধরে কলকাতার মাঠে ফুটবল খেলে চলেছেন। কখনও তালতলা, কখনও ইস্টার্ন রেল, কখনও বা শ্রীভূমিতে। কলকাতা ফুটবল লিগে প্রিমিয়ার ডিভিশনে খেলছে সার্দান সমিতিতে। কিন্তু প্রিমিয়ার লিগে খেলেও তাঁর অর্থ কষ্ট ঘোচেনি।
রামকৃষ্ণ জানান, আমার ইচ্ছে কলকাতার দুই প্রধানের হয়ে গোলরক্ষকের ভূমিকা পালন করা। এমনকী ইচ্ছা ছিল ভারতীয় টিমের হয়ে খেলার। সেজন্য সময় সুযোগ পেলে সকাল বিকেল দু’ বেলাই অনুশীলন করে চলেছি। খেলার সুবাদে সরকারি চাকরি পেলে খুবই উপকৃত হব। রামকৃষ্ণের মা মণি দেবনাথ জানান, ছোটবেলা থেকে ছেলের স্বপ্ন বড় ফুটবলার হওয়ার। এখনও সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। একটা মাত্র চালাঘরে আমরা স্বামী-স্ত্রী দুই সন্তানকে নিয়ে থাকি। আবাস যোজনায় ঘরের জন্য আবেদন করেছিলাম। ওঁরা এসে খোঁজ খবর নিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু ঘর পাইনি। যেভাবে ও কঠোর অনুশীলন করে সেভাবে ওকে আমরা ভালো খাবার দিতে পারি না।
প্রাক্তন ফুটবলার নির্মল ভৌমিক জানান, রামকৃষ্ণ ইস্টার্ন রেলওয়েতে নিয়মিত খেলে টিমকে প্রিমিয়ার লিগে তুলেছিল। তবুও চাকরি জোটেনি। সন্তোষ ট্রফি খেলার ডাক পেয়েছিল। কিন্তু চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ পড়তে হয়েছে। এখন আই লিগ ও আইএসএল খেলার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে রামকৃষ্ণ।