৯ অগস্ট আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে রাজ্য জুড়ে আন্দোলনের সময়েই মেডিক্যাল কাউন্সিলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। কাউন্সিলের নির্বাচিত সদস্য, চিকিৎসক অভীক দে এবং পিনাল অ্যান্ড এথিক্যাল কমিটির মনোনীত সদস্য বিরূপাক্ষ বিশ্বাস কী ভাবে আর জি করের সেমিনার কক্ষে উপস্থিত ছিলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। পাশাপাশি, বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের পরীক্ষা ব্যবস্থা থেকে হুমকি প্রথা-সহ একাধিক দুর্নীতিতে তাঁরাই মূল পান্ডা বলেও অভিযোগ ওঠে। সে সময়ে ওই দু’জনকে সমস্ত কাজকর্ম থেকে সরানোর নির্দেশিকা জারি করে কাউন্সিল। আবার অভীক ও বিরূপাক্ষকে সাসপেন্ড করে স্বাস্থ্য দফতর। গঠিত হয় তদন্ত কমিটি। অন্য দিকে, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তদন্তের আওতাতেও রয়েছেন ওই দুই চিকিৎসক।
এর পরেও সোমবার কাউন্সিলের বৈঠকে অভীকের উপস্থিতি নিয়ে তৈরি হয় বিতর্ক। তাঁকে ফেরানো ও বিরূপাক্ষের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তোলার প্রতিবাদে কাউন্সিলের সামনে অবস্থান শুরু করে ‘জেপিডি’। রাতে সেখানে এসে ‘জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট’-এর তরফে দেবাশিস হালদারের দাবি, ‘‘আর জি করের নির্যাতিতার ন্যায় বিচারের আন্দোলনে কাউন্সিল নিয়ে কেন বলা হয়েছিল, তা নিশ্চয়ই স্পষ্ট হচ্ছে।’’ অভীক-বিরূপাক্ষকে কাউন্সিলে ফেরানোর মধ্যে দিয়ে রাজ্য সরকার হুমকি-প্রথার কান্ডারিদের পাশে দাঁড়াচ্ছে বলেও অভিযোগ ওঠে। দেবাশিস বলেন, ‘‘আন্দোলনের চাপে যাঁদের সরানো হয়েছিল, আন্দোলন স্তিমিত হতেই তাঁদের ফেরানো হচ্ছে। বার্তা দেওয়া হচ্ছে, আন্দোলন করেও লাভ হয়নি। ক্ষমতা ও হুমকির রাজনীতিই বজায় থাকবে। প্রয়োজনে বৃহত্তর আন্দোলনে যাব।’’
এ দিন বিকেলে স্বাস্থ্য ভবনে গেলেও স্বাস্থ্যসচিবের সঙ্গে দেখা হয়নি ‘জেপিডি’র প্রতিনিধিদের। বদলে অন্য এক সচিবের সঙ্গে তাঁদের কথা বলার ব্যবস্থা করে পুলিশ। চিকিৎসক উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছিল, কাউন্সিলের রেজিস্ট্রারের নিয়োগ নিয়ম-বহির্ভূত। তিনি এখনও কী ভাবে রয়েছেন? অভীক-বিরূপাক্ষকে কাউন্সিলে ফেরানো নিয়ে কথা বলতে এসে নিরাশ হতে হল।’’ চিকিৎসক মানস গুমটা বলেন, ‘‘অভীক, বিরূপাক্ষের বিরুদ্ধে তদন্তের রিপোর্ট প্রায় দু’মাস আগে জমা পড়েছে। তাতে বহু অভিযোগ প্রমাণিত। ওঁদের কী ভাবে নির্দোষ বলে কাউন্সিল?’’
রাজ্যে স্বাস্থ্যের গ্রিভান্স ও রিড্রেসাল কমিটির চেয়ারম্যান সৌরভ দত্ত বলেন, ‘‘তদন্ত রিপোর্টের উপরে ভিত্তি করে ব্যবস্থা নিতে মুখ্যসচিবকে আবেদন জানাব। ওঁদের বিরুদ্ধে দোষ প্রমাণিত হলে দ্রুত কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হোক। নির্দোষ হলে তা-ও জানানো হোক।’’ তিনি আরও জানান, কাউন্সিল স্বশাসিত সংস্থা হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কিছু করার বিষয়ে সরকারের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে কাউন্সিলও আইনের ঊর্ধ্বে নয়। সৌরভ বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যে মুষ্টিমেয়দের দাদাগিরির জন্যই শেষ কয়েক মাস সরকারকে খারাপ দিন দেখতে হয়েছে। প্রশাসন জানিয়েছে, দাদাগিরি চলবে না। কেউ এখনও দাদাগিরি চালাবেন ভাবলে ভুল করছেন।’’