• ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মের শেষপ্রান্তে পাঁচিল দিল রেল, সমস্যায় যাত্রীরা, ক্ষোভ বাসিন্দাদের
    বর্তমান | ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪
  • সংবাদদাতা, বোলপুর:‌ সোমবার বোলপুর-শান্তিনিকেতন স্টেশনের এক নম্বর প্ল্যাটফর্মের শেষপ্রান্তে পাঁচিল দিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। আচমকা ঘেরার কারণে স্থানীয় বাসিন্দাদের ঘুরপথ ব্যবহার করতে হচ্ছে। রেলের এই অমানবিক ভূমিকায় ক্ষোভে ফুঁসছেন বোলপুরের বাসিন্দারা। কারণ, শহর বোলপুরে যানজট পুরনো রোগ। বিশেষত শান্তিনিকেতন রোড থেকে স্টেশন রোড পর্যন্ত সংকীর্ণ রাস্তা, টোটো ও যানবাহনের জন্য এমনিতেই সর্বক্ষণ অবরুদ্ধ থাকে সংশ্লিষ্ট এলাকা। স্টেশনে ট্রেন এলে মাছি গলার জায়গা থাকে না।‌ তাই এক নম্বর প্ল্যাটফর্মের শেষ প্রান্তে পাঁচিল তুলে দেওয়ায় প্রবল ভোগান্তি ও সমস্যায় পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও নিত্যযাত্রীরা। বিকল্প ব্যবস্থা না করলে বিক্ষোভ ও আন্দোলন করার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন এলাকাবাসী। পূর্বরেল কর্তৃপক্ষ স্থানীয়দের সমস্যার বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয় সেদিকেই তাকিয়ে সকলে।


    ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে বোলপুর শান্তিনিকেতন স্টেশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের স্বাধীনতার বহুকাল আগে ১৮৬০ সালে ইংরেজরা বাণিজ্যের কারণে এই স্টেশন স্থাপন করেন। রুট হিসাবেও এই স্টেশনের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। কলকাতা থেকে উত্তরবঙ্গ যাওয়ার জন্য বোলপুর-শান্তিনিকেতন স্টেশনের ওপর দিয়েই সব ট্রেনকে যাতায়াত করতে হয়। তবে সংশ্লিষ্ট স্টেশনে যাতায়াতের জন্য নেতাজি ব্রিজ থেকে এক নম্বর প্লাটফর্ম পর্যন্ত একটি রাস্তা রয়েছে, সেটিই এ যাবৎ কাল ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এমনিতেই শান্তিনিকেতন রোড থেকে স্টেশন রোড পর্যন্ত রাস্তায় যানজট পরিচিত চিত্র। তাই ওই বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করতেন মূলত স্টেশন সংলগ্ন চৌরাস্তা, দর্জিপাড়া, মিশন কম্পাউন্ড, ডাঙালি কালীতলা, রেল ময়দান, হরগৌরীতলা, নিচুপট্টি ও ত্রিশুলাপট্টি এলাকার মানুষ। কিন্তু সোমবার এক নম্বর প্ল্যাটফর্মের শেষ প্রান্তে পাঁচিল দিয়ে চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে পূর্বরেল কর্তৃপক্ষ।


    অমৃত ভারত প্রকল্পে বোলপুর-শান্তিনিকেতন স্টেশনকে ঢেলে সাজার কাজ শুরু হয়েছে। তার প্রেক্ষিতেই যাত্রী সুরক্ষা ও নিরাপত্তার জন্যই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে স্টেশন সূত্রে জানা গিয়েছে। পূর্বরেলের এক আধিকারিক বলেন অনেক অসৎ যাত্রী টিকিট কাটেন না বলে টিটিইকে ফাঁকি দিতে ওই রাস্তা দিয়ে বেরিয়ে যান। এছাড়া, প্ল্যাটফর্ম খোলা থাকার ফলে বন্দে ভারত সহ একাধিক দূরপাল্লার ট্রেন অত্যন্ত দ্রুত গতিতে চলাচল করে। ফলে প্রাণহানির আশঙ্কাও থেকে যায়। যাত্রীদের সুরক্ষার সঙ্গে আপস করা হবে না বলেই পাঁচিল দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে। রেলের এই কাজে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ মুলুকের বাসিন্দা বিপত্তারণ ঘোষ, স্টেশন সংলগ্ন দর্জিপট্টির জাহাঙ্গির শেখ ও সুড়িপাড়া ধর্মরাজতলার দীপক ঘোষ সহ স্থানীয় বাসিন্দারা। অভিযোগের সুরে তাঁরা বলেন, অনেক নিত্যযাত্রী সহ গরিব মানুষ ঘুরপথ ও যানজট এড়াতে দীর্ঘকাল যাবত এই রাস্তা পায়ে হেঁটে যাতায়াত করেন। কারোর কোনও সমস্যা হয়নি। আচমকা এই রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ায় প্রবল সমস্যায় পড়েছেন নিত্যযাত্রী সহ স্থানীয়রা। এই পাঁচিল দেওয়া হলে বোলপুর শহরে যানজট ভয়াবহ রূপ নেবে। বিষয়টি মানবিকভাবে দেখার জন্য রেল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানাই। তবে আর্জি জানানোর পাশাপাশি রেলকে হুঁশিয়ারিও দিয়েছে বোলপুর ব্যবসায়ী সমিতি। সম্পাদক সুনীল সিং বলেন যানজটে এমনিতেই নাকাল শহরবাসী। ওই পাঁচিলের পরিবর্তে গেট ব্যবহার করলে সবদিক থেকেই সমস্যার সমাধান হবে। বিষয়টি বিবেচনা না করলে পরবর্তীকালে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। পূর্বরেলের জনসংযোগ আধিকারিক দীপ্তিময় দত্ত বলেন, যাত্রী সুরক্ষা ও অবাঞ্ছিত প্রবেশ আটকাতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি টিকিট না কেটে যাত্রা করার প্রবণতাও কমবে। তবে স্থানীয়দের সমস্যা হলে তাঁরা বিষয়টি রেল কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে আবেদন জানাতে পারেন। দাবি বৈধ হলে অবশ্যই তা খতিয়ে রাখা হবে।
  • Link to this news (বর্তমান)