• ফের রোগীমৃত্যুতে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ, ক্ষোভ
    বর্তমান | ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪
  • সংবাদদাতা, সিউড়ি: ফের সিউড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে চিকিৎসায় গাফিলতিতে রোগীমৃত্যুর অভিযোগ উঠল। সড়ক দুর্ঘটনায় জখম রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও সঠিক সময়ে চিকিৎসক সেখানে না পৌঁছনোয় রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ। বুধবার ভোর ৫টা নাগাদ সিউড়ি এসপি মোড়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন ঝাড়খণ্ডের রানিশ্বর থানার সাদিপুর গ্রামের মাছ বিক্রেতা তাপস ধীবর(৪৮)। শীতকালের ভোরে ওই রাস্তায় তেমন লোকজন ছিলেন না। পুলিস তাঁকে উদ্ধার করে সিউড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করে। পুলিসই ওই ব্যক্তির পরিবারকে খবর দেয়। তারপর পরিবারের লোকজন হাসপাতালে আসেন। রোগীর পরিবারের লোকজনের অভিযোগ, ভোর সাড়ে ৫টার মধ্যে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিস। কিন্তু তখন থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত কোনও ডাক্তার‌ই তাঁকে দেখতে ওয়ার্ডে আসেননি। কোনও চিকিৎসা না পেয়েই হাসপাতালের বেডে ওই রোগীর মৃত্যু হয়েছে। 


    জানা গিয়েছে, তাপসবাবু মাছের ব্যবসা করতেন। সিউড়ির আড়ৎ থেকে মাছ নিয়ে রানিশ্বরের গ্রামে গিয়ে বিক্রি করতেন। বুধবার ভোরেও তিনি সিউড়ির মাছের আড়তেই যাচ্ছিলেন। এসপি মোড়ে দুর্ঘটনাটি ঘটে। মৃতের স্ত্রী মিঠু ধীবর বলেন, ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে বেলা ১১টা অবধি কোনও ডাক্তার আমার স্বামীকে দেখতে আসেননি। বারবার নার্সদের মাধ্যমে চিকিৎসককে ডাকা হলেও আসেননি। স্বামীর মৃত্যুর পর তখন চিকিৎসক এসে রোগী মারা গিয়েছে বলে জানান। উনি সময়মতো চিকিৎসা করলে স্বামীকে বাঁচানো যেত। স্বামী মৃত্যুর আগে আমার সঙ্গে কথা বলেছে। ওর শরীরে খুবই যন্ত্রণা হচ্ছিল। বারবার ডাক্তারবাবুকে ডাকলেও তিনি এলেন না। চিকিৎসায় গাফিলতিতেই ওর মৃত্যু হয়েছে। মিঠুদেবী আক্ষেপের সুরে বলেন, কোথায় আর অভিযোগ করতে যাব। মানুষটাই তো চলে গেল। এখন অভিযোগ করতে গেলে হাসপাতালের লোকেরা এটা সেটা বুঝিয়ে এড়িয়ে যাবে। তাতেই ওরা পার পেয়ে যাবে। 


    সিউড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে বারবার চিকিৎসায় গাফিলতিতে রোগীমৃত্যুর অভিযোগ উঠছে। কিন্তু কোনও হেলদোল নেই স্বাস্থ্যদপ্তর বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। রোগীমৃত্যুর পর সাময়িক তদন্তের পর রোগীর তরফে লিখিত অভিযোগ হয়নি বলে ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে। প্রতি ক্ষেত্রেই রোগীর আত্মীয়দের অভিযোগ, হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ডে নিয়মিত এবং সময়মতো চিকিৎসকদের ডাকলেও তাঁরা আসেন না। নার্সদের একাংশ রোগী ও পরিজনদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন বলেও অভিযোগ। কিছুদিন আগেও এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে হাসপাতালে ভর্তির পর চিকিৎসক সময়মতো আসেননি বলে অভিযোগ ওঠে। ওই রোগিণীর মৃত্যু হয়। অস্ত্রোপচার করে প্রসব করানো হলেও ২৮ঘণ্টার মধ্যেই শিশুরও মৃত্যু হয়। সেই ঘটনায় রোগীর পরিবারের কেউ লিখিত অভিযোগ না করলেও তদন্ত হচ্ছে বলে জানান জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক। সিএমওএইচ হিমাদ্রি আড়ি বলেন, হাসপাতালে কী ঘটনা ঘটেছে আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি। তবে আগের ঘটনায় রোগীর পরিবারের কেউ অভিযোগ করেননি। আমরা নিজেদের উদ্যোগেই তদন্ত করছি।
  • Link to this news (বর্তমান)