সংবাদদাতা, শান্তিনিকেতন: লাভপুরের হাঁসুলি বাঁককে কেন্দ্র করে পর্যটন ক্ষেত্র গড়ে তোলার উদ্যোগ নিল বীরভূম প্রশাসন। বুধবার এই এলাকা পরিদর্শন করেন লাভপুর ব্লকের বিডিও এবং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সহ অন্যান্যরা। বীরভূম জেলাজুড়ে পর্যটন শিল্পকে আরও উন্নত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে রাজ্য পর্যটন দপ্তরের পক্ষ থেকে। সেই মতো সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতি বিজড়িত লাভপুরের হাঁসুলি বাঁককে ভ্রমণপিপাসুদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলা হবে। স্বাভাবিকভাবেইএই খবরে খুশি লাভপুর সহ বোলপুর মহকুমার বাসিন্দারা।
সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় হাঁসুলি বাঁকের উপকথায় লিখে গিয়েছিলেন কোপাই নদীর অপরূপ সৌন্দর্যের কথা। তাঁর লেখনির মাধ্যমেই আজও অমর হয়ে রয়েছে লাভপুরের হাঁসুলি বাঁক। তবে প্রকৃতির নিয়মে ভাঙ্গাগড়ার মধ্য দিয়ে কোনক্রমে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে হাঁসুলি বাঁক। এই জেলায় কবিগুরুর শান্তিনিকেতন, পাঁচটি সতীপীঠ ও তারাপীঠ, উষ্ণ প্রস্রবণ, অভয়ারণ্য সহ একাধিক ঐতিহাসিক পর্যটনস্থল রয়েছে এখানে। তাই জেলায় পর্যটন শিল্পে আরও গতি আনতে এবার হাঁসুলি বাঁককে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই এলাকায় মোট সাড়ে সাত বিঘা জমি জুড়ে পর্যটন শিল্প করা হবে। নদী বাঁকের সৌন্দর্য ও সবুজে ঘেরা এলাকা দূর পর্যন্ত দেখার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হবে ওয়াচ টাওয়ার। নদীর উপর একটি ফুট ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। সঙ্গে এই জায়গায় সুস্থভাবে চলাফেরা করার জন্য নির্মিত হবে সুদৃশ্য ফুটপাত। পরবর্তীতে পরিস্থিতি বিবেচনা করে গড়ে তোলা হতে পারে কটেজ। যেখানে পর্যটকরা এসে মনোরম পরিবেশে রাত্রিবাস করতে পারবেন।
উল্লেখ্য, ১৯৫৫ সালে কোপাই ও বক্রেশ্বর নদী ঘেরা এই অঞ্চলকে নিয়ে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচনা করেছিলেন হাঁসুলি বাঁকের উপকথা। সেই সময় তাঁর উপন্যাসে উঠে এসেছিল এই এলাকার মানুষের জীবনযাত্রা, তাদের সুবিধা অসুবিধার ছবি। তারপরেও লাভপুরের বাসিন্দাদের অভিযোগ ছিল উন্নয়নের নিরিখে অনেকটাই উপেক্ষিত রয়েছে এই এলাকা। প্রশাসনের এই উদ্যোগের পর তাঁরা আশাবাদী আগামীতে লাভপুর জেলার মধ্যে অন্যতম স্থান হয়ে উঠবে হাঁসুলি বাঁক। যদিও এর আগে একবার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা ফলপ্রসু হয়নি। এবার জেলা ও ব্লক প্রশাসন এই উদ্যোগ নেওয়ায় আশায় বুক বাঁধছেন লাভপুরের বাসিন্দারা।
কিছুদিন আগে অভিযোগ উঠেছিল, লাভপুরের বালি মাফিয়ারা হাঁসুলি বাঁক খ্যাত কুয়ে নদী থেকে বেআইনিভাবে বালি তুলে নিচ্ছে। যার ফলে ভৌগোলিক অবস্থান বদলে গিয়ে অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছিল হাঁসুলি বাঁক। সেই খবর প্রকাশ হতেই পুলিস ও প্রশাসনের উদ্যোগে বালি তোলা বন্ধ করা হয়। লাভপুর ব্লকের বিডিও শিশুতোষ প্রামাণিক বলেন, এদিন প্রাথমিকভাবে আমরা এলাকা পরিদর্শন করেছি। সমস্ত রিপোর্ট উচ্চ নেতৃত্ব ও পর্যটন দপ্তরে জমা দেওয়া হবে। তারপর নির্দেশমতো কাজ শুরু করা হবে।