নিজস্ব প্রতিনিধি, ঝাড়গ্ৰাম: জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে মেঠো পথ। সেই পথেই রাত নামলে আলু বোঝাই লরি জামবনি ব্লকের সীমানা দিয়ে ঝাড়খণ্ডে পাঠানো হচ্ছিল। পাচারের খবর প্রকাশ হতেই প্রশাসনিক মহলে তোলপাড় শুরু হয়। বুধবার সকালে রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী বেচারাম মান্না পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার জন্য জামবনি ব্লকের সোনামুখী গ্ৰামে পৌঁছন। গ্ৰামের বাসিন্দাদের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেন। পাচার রুখতে গ্ৰামবাসীদের কাছে সহযোগিতার আবেদন জানান। মন্ত্রীর সঙ্গে জেলার পুলিস প্রশাসনের উচ্চ আধিকারিকরাও উপস্থিত ছিলেন। আলু পাচারের অভিযোগে পুলিস ইতিমধ্যেই চারজনকে গ্ৰেপ্তার করেছে।
ঘূর্ণিঝড় ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে এবার আলু চাষ দেরিতে হয়েছে। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে মাঠ থেকে আলু ওঠার কথা ছিল। আগামী জানুয়ারি মাসে নতুন আলু বাজারে আসবে। বিষয়টি মাথায় রেখে ভিনরাজ্যে আলু যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। অভিযোগ ওঠে, সেই নির্দেশ উপেক্ষা করে জামবনি ব্লকের জঙ্গল ও মেঠো পথ দিয়ে আলুবোঝাই লরি পার্শ্ববর্তী রাজ্যে পাঠানো হচ্ছিল। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই প্রশাসনিক স্তরে নজরদারি ও তৎপরতা বাড়ানো হয়। মন্ত্রী আসতেই স্থানীয় তৃণমূল নেতারা আলু পাচার নিয়ে মুখ খোলেন। জেলার সীমানা দিয়ে বেআইনিভাবে আলুবোঝাই লরি যে পার হচ্ছিল, তা একপ্রকার স্পষ্ট হয়ে যায়। জামবনি ব্লকের চিল্কিগড় গ্ৰাম পঞ্চায়েতের সোনামুখি গ্ৰামে কৃষি বিপণন মন্ত্রীর আসাও তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। সোনামুখি গ্ৰাম দিয়ে ওড়িশা ও ঝাড়খণ্ড সহজে পৌঁছনো যায়। গ্ৰামের একটি রাস্তা মানুষমুড়িয়া হয়ে ওড়িশার দিকে গিয়েছে। অন্য রাস্তাটি গিয়েছে ঝাড়খণ্ডে চাকুলিয়ায়।
মন্ত্রী বেচারাম মান্না বলেন, আমাদের কাছে খবর ছিল জামবনি সহ জেলার বিভিন্ন সীমানা দিয়ে আলু বোঝাই গাড়ি ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশার দিকে চলে যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর করতে এখানে এসেছি। বেশ কয়েকজনকে ইতিমধ্যেই গ্ৰেপ্তার করা হয়েছে। রাজ্যের ভাণ্ডারে ৬ লক্ষ ২ হাজার মেট্রিক টন আলু রয়েছে, যা পর্যাপ্ত। ঘূর্ণিঝড় ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে এবার আলুচাষ অনেকটাই পিছিয়ে যায়। ডিসেম্বরের ২৫ তারিখ যে নতুন আলু পাওয়া যেত তা পেতে পেতে জানুয়ারির ১০ থেকে ১৫ তারিখ হয়ে যাবে। রাজ্যের মানুষের যতটা আলুর প্রয়োজন, তা রেখে বাড়তি অংশ বাইরে পাঠাতে বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তারপরেও অসাধু ব্যবসায়ীরা আলু ভিন রাজ্যের চালান করছিলেন। পাচার রুখতে প্রশাসন সক্রিয়। গ্ৰামবাসীদের কাছেও এদিন সহযোগিতার আবেদন করেছি। খবর পেলে তাঁরা যেন পুলিসকে জানান।